“সেই স্বাধীনতার ইতিহাস কি বিকৃত হয় নাই? এবং সেখানে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শামিল হই নাই?”- বলেন হানিফ।
Published : 19 Aug 2022, 11:27 PM
শিক্ষার অধঃপতনের জন্য শিক্ষক রাজনীতিকে দায়ী করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন।
শুক্রবার ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার” শীর্ষক এক আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন।
হানিফ বলেন, “বছর দশেক আগে আমি বলেছিলাম বাংলাদেশের শিক্ষার অধঃপতনের জন্য ছাত্র রাজনীতি যতটা না দায়ী, শিক্ষক রাজনীতি তার চেয়ে বেশি দায়ী।
“অনেকে এই বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন,অনেকে তাদের দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ আলোচনাসভায় তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ দুটি এক ও অভিন্ন।
“বাংলাদেশের ইতিহাস বলতে গেলে বঙ্গবন্ধুর কথা চলে আসে, আর বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে গেলে বাংলাদেশের ইতিহাস চলে আসে।”
এসময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “যেই বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি, সেই স্বাধীনতার ইতিহাস কি বিকৃত হয় নাই? এবং সেখানে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শামিল হই নাই?
“আমাদের স্বাধীনতা কি কোনো গোল টেবিল বৈঠকে হয়েছিল? কোনো মেজরের বাঁশির হুইসেলে এসেছিল?”
ইতিহাসের বিভিন্ন পর্ব উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, “দীর্ঘ এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছিল। জাতির পিতার নেতৃত্বে ৪৭ এর দেশভাগের পর ধাপে ধাপে একাত্তরের বিজয় এসেছিল।”
তিনি বলেন, “২৭ তারিখ বিকাল ৫টায় জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে।
“ইতিহাস বিকৃত করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা! কিসের লোভে! কেন? যে শিক্ষক নিজের সৃষ্টির ইতিহাস বিকৃত করে, তার দ্বারা মানুষ গড়া সম্ভব না।
“তার দ্বারা নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন আদর্শ মানুষ গড়ে উঠবে-এটা আশা করা মোটেও উচিত নয়।”
এসময় খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৫ অগাস্ট সমর্থন করে লেখা বইয়ের প্রশংসা করা নিয়ে ঢাবি আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, “এই ঘটনায় সরাসরি যারা জড়িত তাদের বিচার হয়েছে। কিছু এখনও বাহিরে আছে। কিন্তু এর পেছনের কুশীলবদের বিচারের জন্য একটি তদন্ত কমিটি প্রয়োজন।
“পাকিস্তানিদের এজেন্ট হিসেবে যারা কাজ করেছে, তারা পরাজিত হলেও এখনো তাদের ষড়যন্ত্র আছে। বিদেশিদের কাছে নানাভাবে মিথ্যা অভিযোগ করে আমাদের সরকারকে উৎখাতের স্বপ্ন দেখে।”
এসময় তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু কতগুলো ভিন্ন অভিধা বটে। তবে এগুলো একই সূত্রে গাঁথা।”
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- এসডিজি অর্জনে বর্তমানে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যাবস্থার কথা বলা হয় তা বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শে ছড়িয়ে আছে বলে জানান উপাচার্য।
“অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের যেই স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখতেন, তিনি দেখতেন ষাটের দশকে। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশ্বাস করে আমরা সেগুলো অর্জন করব।”
ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, সাবেক মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার, প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার রকিবুল হাসান এবং বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোল্লা মোহাম্মাদ আবু কাওছার।