নতুন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে ‘ব্যক্তিগত’ আক্রমণ করা হচ্ছে: দীপু মনি

“যারাই আমাদেরকে ভুল দেখিয়ে দিচ্ছেন, যেই ভুল দেখিয়ে দিচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে দিচ্ছি,” বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

স্কুল পর্যায়ের তিন শ্রেণিতে চলতি বছর যে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে তার পরীক্ষামূলক বই নিয়ে একটি ‘চিহ্নিত গোষ্ঠী’ অপপ্রচারে নেমেছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

তিনি বলেছেন, ”আমাদের নতুন কারিকুলামটি শুরু হল যখন, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে, অভিভাবকদের মধ্যে এবং আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে একটা ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া ফেলে। কারণ শিক্ষাটাকে আমরা আনন্দময় করতে চাই। শুধুমাত্র পরীক্ষাভীতি, মুখস্ত বিদ্যা তা দিয়ে কিন্তু সোনার মানুষ তৈরি হবে না; তা দিয়ে দক্ষ, যোগ্য, মানবিক, সৃজনশীল মানুষ তৈরি হবে না।

“বইগুলোর মধ্যে ভুল থাকতে পারে। আমরা বলেছি- ভুল থাকলে, চিহ্নিত হলে সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন হবে। কারণ এগুলো পরীক্ষামূলক সংস্করণ। যারাই আমাদেরকে ভুল দেখিয়ে দিচ্ছেন, যেই ভুল দেখিয়ে দিচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে দিচ্ছি।”

বৃহস্পতিবার আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

দীপু মনি বলেন, “একটি শ্রেণি অপপ্রচার চালাচ্ছেন এবং অপপ্রচার চালাবার পাশাপাশি লেখক, শিক্ষক, যেসব শিক্ষাবিদ-বিশেষজ্ঞরা জড়িত ছিলেন, আমরা যারা মন্ত্রণালয়ে আছি, আমাদেরকে কদর্য ভাষায়, কুৎসিতভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছে এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

”ভুলত্রুটি যা রয়েছে, তা সংশোধন করা হচ্ছে। কিন্তু যে বিষয় বইয়ে নেই, যে বিষয় যেভাবে নেই, যে কথা বইতে বলা হয়নি, যে ছবি আমার বইতে নেই; মিথ্যাচার করে, ফটোশপ করে, এডিট করে- সেগুলো আমাদের বইয়ের অংশ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

অপপ্রচারকারীদের পরিচয় বর্ণনা করতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, কিন্তু তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমের বইগুলো পড়ানো হয় না, তারা ব্যাপকভাবে এই বইগুলো নিয়ে অপপ্রচারে নেমেছেন।”

শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ”এরা কারা? এরাই তারা- যারা পঞ্চাশের দশকে বলেছিল, নৌকায় ভোট দিলে বিবি তালাক হয়ে যাবে। এরাই তারা- যারা নব্বইয়ের দশকে বলেছিল, নৌকায় ভোট দিলে ফেনী পর্যন্ত ভারতের অংশ হয়ে যাবে, মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি হবে। এর কোনোটিই কিন্তু ঘটেনি।

“এই একই অপশক্তি নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যেখানে বইতে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে- মানুষ বানর থেকে হয়নি, সেখানে তারা বলছেন যে- আমরা নাকি বইতে বলেছি, বানর থেকে মানুষ হয়েছে। এই মিথ্যাচার, অপপ্রচার কেন? এবং আরও যা যা বলেছে তার প্রত্যেকটির জবাব আছে।”

পাঠ্যপুস্তকের ভুল সংক্রান্ত বিষয়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “একটি কমিটি বইয়ে ভুল থাকলে বলবে, সেটি আমরা শুদ্ধ করে দেব। আর ভালো পরামর্শ থাকলে দেবে, তারা যা কিছু যৌক্তিক বলে পরামর্শ দেবে আমরা তা গ্রহণ করব। আরেকটি কমিটি করেছি, কারণ কেউ কেউ বলেছেন- এর মধ্যে চক্রান্ত আছে, ষড়যন্ত্র আছে। এগুলো তদন্ত করবার জন্য।”

দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ”আমাদেরকে সনাতনী চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন চিন্তা করতে হবে; মডিউলার এডুকেশনে যেতে হবে, ব্লেন্ডেড লার্নিং চালু করতে হবে। আমাদের অনেক বেশি শর্ট কোর্স, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স দিতে হবে।”

দীপু মনি বলেন, ”গবেষণা শুধু গবেষণার স্বার্থেই নয়, গবেষণা করলাম, গবেষণাপত্রে ধুলো জমলো, তাহলে লাভ নেই। গবেষণা ও উদ্ভাবনকে ইনকিউবিশন ও কমার্শিয়ালাইজেশনে নিয়ে যেতে হবে। বাণিজ্যিকীকরণ পর্যন্ত যদি না যাওয়া যায়, তা যদি আমার শিল্পকে সহায়তা না করে, তাহলে সেই গবেষণার করে কোনো লাভ নেই।”

ভারতের হিমাচল প্রদেশের শূলিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও উপাচার্য অধ্যাপক অতুল খোসলা সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম লুৎফর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।