করোনাভাইরাসের মহামারীর প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল সেন্টারের পরিধি ও জনবল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
Published : 06 Jul 2020, 11:39 PM
২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচতলার দুটি রুমে বর্তমানে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম চলছে।
জনবল ও উপকরণ সঙ্কটে অপ্রতুল সেবার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এর আধুনিকায়নের দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।
করোনাভাইরাসের নতুন বাস্তবতায় মেডিকেল সেন্টারটি সম্প্রসারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবনে স্থানান্তরের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসের মূল সমস্যা হল, এখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব না। সেজন্য আমরা ইতোমধ্যে দুইজন ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছি। আরেকজন আছেন আগে থেকেই৷ তিনজন চিকিৎসক দিয়ে একটা মিনি হাসপাতালের মতো তৈরি করব।
ক্যাম্পাস চালুর পরপরই মেডিকেল সেন্টারটি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুত রাখতে চলমান ছুটির মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন উপাচার্য।
চতুর্থ তলার অবকাশ ভবনের নিচতলার পুরোটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া। বাকি তিন তলায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
নতুন পরিকল্পনায় ভবনটির দ্বিতীয় তলা থেকে ছাত্র সংসদ, রেঞ্জার ইউনিট, রোভার স্কাউটস, রিপোর্টার্স ইউনিটি ও তৃতীয় তলা থেকে চলচ্চিত্র সংসদ, ডিবেটিং সোসাইটি, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, বিএনসিসি ও সাংবাদিক সমিতিকে অফিস ছাড়তে হবে।
ফলে অবকাশ ভবনে মেডিকেল সেন্টার স্থানান্তরের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিকর্মীরা।
চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি মেহেদী হাসান রাব্বি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অবকাশ ভবনে অর্ধশত বছর ধরে সাংস্কৃতিক চর্চা হয়ে আসছে। এখান থেকে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সরানোর সিদ্ধান্ত একদমই কাম্য না৷ এটা আমাদের ঐতিহ্য, তা সংরক্ষণ করতে হবে।"
“বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাদের সাথে কথা না বলে, আমাদের কথা বোঝার চেষ্টা না করে; তাহলে আমরা এই পরিস্থিতিতে যে যেখানে আছি, সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে একত্রিত হয়ে এ সিদ্ধান্ত প্রতিহত করব।”
অবকাঠামোগতভাবে অবকাশ ভবন মেডিকেল সেন্টারের উপযোগী নয় দাবি করে তা অ্যাকাডেমিক ভবনে করার দাবি জানিয়েছেন রাব্বি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি জুনাইদ হোসাইন ইমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কোনভাবেই অবকাশ ভবন থেকে সরে যেতে চাইব না। এটা আমাদের আবেগ, স্মৃতি সবকিছুর জায়গা।
“প্রশাসন এখনো আমাদের কোন নোটিস দেয়নি। করোনার পরে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে সংগঠনগুলোর সাথে কথা বলে সিদ্ধান্তে আসা যেত, সে কাজটাও তারা করছে না। সেখানে এখন আমাদের অনেক মালামাল আছে, সেগুলো কোথায় যাবে?”
ইমন বলেন, “কর্তৃপক্ষ মেডিকেল সেন্টার করতে চায়, আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু তাদের হাতে যখন বিকল্প আছে, তখন তা ব্যবহার না করে অবকাশ ভবনে করতে চাচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত কোনভাবেই যৌক্তিক না৷
তবে অবকাশ ভবনের সংগঠনগুলোকে ভাষাশহীদ রফিক ভবনে স্থানান্তরের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন উপাচার্য।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। কিন্তু এগুলো তো আপাতত লাগছে না। কদিনের মধ্যে তো কনসার্ট, নাটক, অনুষ্ঠান করার সুযোগ নাই।
“যখন তাদের কাজের সুযোগ আসবে, তখন রফিক ভবনের নিচতলার ছয়টা ক্লাসরুমকে ভেঙে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বড় জায়গা করব। রিহার্সেলের জন্য একটা রুম রাখব৷ আর এখানকার ক্লাসরুমগুলো অ্যাকাডেমিক ভবনে সরিয়ে ফেলব।”