২০ হাজার শিক্ষার্থীর জগন্নাথে চিকিৎসক মাত্র একজন

বিশ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র একজন চিকিৎসককে দিয়ে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। তার উপর উপকরণ সংকটে সেই সেবাও ব্যাহত হচ্ছে।

সাবিকুন্নাহার লিপিসাবিকুন্নাহার লিপি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2019, 06:37 AM
Updated : 6 July 2020, 05:25 PM

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নীচতলার দুটি রুম রয়েছে মেডিকেল সেন্টারের অধীনে। এর একটিতে চলে চিকিৎসা সেবা, যেখানে ওষুধের একটি আলমারি, একটি বেড ও একটি ফ্রিজ রয়েছে।

অন্য রুমে একটি করে বেড, আলমারি ও হুইল চেয়ার রাখা। রুমটি খাওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের সামগ্রী রাখার কাজেও ব্যবহৃত হয়। শুধু জরুরি প্রয়োজন হলে এখানে রোগীদের রাখা হয়।

মেডিকেল সেন্টারটিতে চিকিৎসা সেবা প্রদানে রয়েছেন মাত্র একজন ডাক্তার। তাকে সাহায্য করেন একজন সিনিয়র মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, একজন অস্থায়ী মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও একজন টেকনিক্যাল অফিসার।

তারা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থী, স্টাফ ও তাদের পরিবার এবং শিক্ষকরা মিলে গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৬০ জন রোগী আসেন সেন্টারটিতে।

এখানে ড্রেসিং, রক্তচাপ মাপা, ডায়াবেটিস পরীক্ষা, ওজন পরিমাপ ও শ্বাসকষ্টের জন্য নেবুলাইজেশনের মত সেবাগুলো পাওয়া যায় শুধু, রোগ নির্ণয়ের জন্য কোনো যন্ত্র নেই। সেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিস্তর অভিযোগ।

এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফার্মেসিতে যেমন চিকিৎসা পাওয়া যায় এখানে তেমনই, বাড়তি কিছু নেই। সামান্য কিছুর জন্য আসলেও অন্য কোথাও সাজেস্ট করে। আমার প্রেশার বেশি, আমাকে অন্য জায়গায় সাজেস্ট করে দিছে। ওষুধ পর্যন্ত লিখে দিতে পারেনি।”

আরেকজন বললেন, “চিকিৎসা নিতে এসে ডাক্তার পাই না৷ এখানে সব ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ। নাপা (প্যারাসিটামল) ছাড়া কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না৷ যে রোগের জন্যই আসা হয়, নাপা ধরিয়ে দেয়। রোগ নির্ণয়ের কোন যন্ত্রও নেই।”

চিকিৎসক মিতা শবনম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিক এঙ্গেলে সব চিকিৎসা করা হয়। সম্ভব না হলে রেফার করা হয়। চাহিদামত সেবা দিতে পারছি না, তবে সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি।

“জ্বর, বমি, প্রেশার নিয়ে অনেকে আসে, তাদের ১-২ দিনের ওষুধ দেওয়া হয়। রোগীর একদিনের যে ওষুধ দরকার সেটি দেই। ক্যাম্পাসে ঝামেলা হলে শিক্ষার্থীরা আসলে ব্যান্ডেজ করে দেই, ব্যাথার ওষুধ খাওয়াই, ওষুধ দিয়ে দেই।”

মেডিকেল সেন্টারের নানা সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের জায়গা খুবই কম। এমনও অবস্থা হয় নিজেদের চেয়ার ছেড়ে দিয়ে রোগীকে বসাই। স্টাফও কম, হিমশিম খেতে হয়। ম্যানপাওয়ার এবং জায়গার সংকটটা বেশি। আমার কলিগ দরকার, যে রোগী ভাগ করে নেবে, ডিউটি ভাগ করে নেবে।

“অ্যাম্বুলেন্স মাত্র একটি। যাকে গুরুতর অসুস্থ মনে হয় তাকে অ্যাম্বুলেন্সে অন্য হাসপাতালে পাঠাই। তখন গুরুতর আরেকজন আসলে তাকে নিজে থেকে ব্যবস্থা করে নিতে বলতে হয়।”

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার উপাচার্যের দপ্তরে গেলে তার একান্ত সচিব ও দপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যারের সাথে তো দেখা করতে পারবেন না। স্যার সাংবাদিকদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন, কথা বলতে চাচ্ছেন না কারো সাথে; দেখাও দিতে চাচ্ছেন না।”

পরে মুঠোফোনে মন্তব্য জানতে চাইলে প্রশ্ন শুনে উপাচার্য বলেন, “টেলিফোনে আমি কোনো কথা বলব না৷”

দপ্তরে গিয়ে লিখিত প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “তারপর ওখানে কী আছে না আছে, হিসাব করে কথা বলব। টেলিফোনে কথা বললে, পরে আমি একটা বলব; আপনারা একরকম বলবেন।”