পণ্য রপ্তানির মতো বাংলাদেশে সেবা রপ্তানির পালেও হাওয়া লেগেছে।
Published : 13 Feb 2019, 05:14 PM
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) সেবা রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ২৮৭ কোটি ১৩ লাখ ডলার আয় করেছে।
এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।আর নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।
অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সামগ্রিক রপ্তানি বাণিজ্যেই ইতিবাচক হাওয়া বইছে। অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৮ শতাংশ বেশি। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ১৫ শতাংশের মতো।
“পণ্য রপ্তানি বাড়লে সেবা খাতের রপ্তানি বাড়বে-এটাই স্বাভাবিক।কেননা, এক খাত অন্য খাতের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্কিত এবং নির্ভরশীল।”
‘আগামীতে পণ্য ও সেবা রপ্তানি আরও বাড়বে’ আভাস দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এই গবেষক বলেন, “নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকারই দায়িত্ব নিয়েছে। ভোটের আগে-পরে দেশে কোন অস্থিরতা নেই। সরকারের ধারাবাহিকতায় উন্নয়নের ওধারাবাহিকতা থাকে। রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তাই হবে বলে আমার বিশ্বাস।”
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বুধবার সেবা খাতের রপ্তানির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিদেশে বিভিন্ন সেবা বিক্রি করে ২৮৭ কোটি ১৩ লাখ (২.৮৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
এই অংক গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।গত বছরের এই ছয় মাসে সেবা রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছিল ১৯০ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ।চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এ খাতের রপ্তানির লক্ষ্য ধরা ছিল ২৫০ কোটি ডলার।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই ছয় মাসে সেবা খাতের রপ্তানি আয়ের মধ্যে ২৮০ কোটি ৮৮ লাখ ডলারই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে। অর্থাৎ মোট রপ্তানির ৯৮ শতাংশই এসেছে সরাসরি সেবা খাত থেকে।
বাকিটা দেশের বন্দরগুলোতে পণ্যবাহী জাহাজগুলোর কেনা পণ্য ও সেবা এবং মার্চেন্টিংয়ের অধীনে পণ্য বিক্রির আয়।
কোনো অনাবাসীর কাছ থেকে পণ্য কিনে একই পণ্য কোনো অনাবাসীর কাছে বিক্রি করাকে মার্চেন্টিং বলে। এই প্রক্রিয়ায় মোট বিক্রি থেকে মোট ক্রয় বাদ দিয়ে নিট মার্চেন্টিং রপ্তানি আয় হিসাব করা হয়।
দেশের স্থল, সমুদ্র বা বিমান বন্দরে বিদেশি পরিবহনগুলো সেসব পণ্য ও সেবা- যেমন জ্বালানি তেল ও মেরামত সেবা- কিনে থাকে সেগুলোকে সেবা খাতের আওতায় ধরা হয়েছে।
জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সেবা খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে সরকারি পণ্য ও সেবা রপ্তানি থেকে। এ উপখাত থেকে এসেছে ১১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
অন্য উপখাতগুলোর মধ্যে ‘অন্যান্য ব্যবসায় সেবা থেকে এসেছে ৪৮ কোটি ২৪ লাখ ডলার। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে আয় হয়েছে ২৯ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।
বিভিন্ন ধরণের পরিবহন সেবা (সমুদ্র, বিমান, রেল এবং সড়ক) থেকে ৩৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার আয় হয়েছে।
আর্থিক সেবা খাত থেকে ৫ কোটি ৭১ লাখ ডলার এবং ভ্রমণ সেবা উপখাত থেকে ১৭ কোটি ৭৬ লাখ ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে।
ইপিবি চলতি অর্থবছরে সেবা খাতের রপ্তানির ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) তথ্য প্রকাশ করলেও পণ্য রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেছে সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি)।
জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ দুই হাজার ৪১৮কোটি (২৪.১৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে।
এই অংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
ছয় মাসের সেবা রপ্তানি এবং সাত মাসের পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ মোট আয় করেছে ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৮ লাখ (২৭.০৫ বিলিয়ন) ডলার; প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সেবা খাত থেকে মোট আয় হয় ৪৩৪ কোটি (৪.৩৪ বিলিয়ন) ডলার । পণ্য রপ্তানি করে আসে ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার।
সে হিসেবে গত অর্থবছরের পণ্য ও সেবা খাত মিলে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি ৭৮ লাখ ডলার।
তার আগের বছরে (২০১৬-১৭ অর্থবছর) সেবা খাত থেকে আয় হয়েছিল মোট ৩৪২ কোটি ডলার।ওই বছরে পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার ডলার।
সে হিসেবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পণ্য ও সেবা খাত মিলে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৮০৭ কোটি ৫৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি (৩৯ বিলিয়ন) ডলার।আর সেবা রপ্তানির লক্ষ্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার।
দুইটা মিলিয়ে মোট লক্ষ্য ধরা আছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি (৪৪ বিলিয়ন) ডলার।