বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের যন্ত্রপাতি, সুতা ও রাসায়নিক সামগ্রী নিয়ে চার দিনের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘টেক্সটেক বাংলাদেশ’ শুরু হয়েছে।
Published : 09 Aug 2017, 10:24 PM
বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
সেমস গ্লোবাল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেরুন এন ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মনসুর আহমেদসহ শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্পের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, সুতা ও কাপড় তৈরির যন্ত্রপাতি, রং ও প্রয়োজনীয় রাসায়নিকের সমাহার নিয়ে একই ছাদের নিচে ‘১৮তম টেক্সটেক বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো’, ‘১২তম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার্ন অ্যান্ড ফেব্রিক শো’ ও ‘২৮তম ডাই-ক্যাম বাংলাদেশ এক্সপো’ নামে তিন ভাগে বিভক্ত এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী দেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাতে গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন শিল্পমন্ত্রী।
দেশের অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধিতে টেক্সাটাইল ও গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা তুলে ধরে শিল্পমন্ত্রী জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি এসেছে পোশাক শিল্পখাত থেকে। “এছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম চালিকাশক্তি এ শিল্প, শিল্প কারখানাগুলোতে ৪৪ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেছে, এর ৮০ শতাংশই নারী।”
এই প্রদর্শনী সরাসরি বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্পখাতের আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে অব্দান রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শিল্পমন্ত্রী।
দেশের তৈরি পোশাকখাত এগিয়ে নিতে এ শিল্পের আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এফবিসিসিআই সভাপতিও।
তিনি বলেন, “আমাদের এমন মেশিনারিজ প্রয়োজন যা চালাতে কম শক্তি ও পানি প্রয়োজন। এই প্রদর্শনী আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে।”
ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের সেতুবন্ধন
শুরুর দিনেই জমে উঠেছে প্রদর্শনী।বাংলাদেশসহ ২৫ দেশের প্রায় সাড়ে ১১শ প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহনের এই প্রদর্শনী দেশি-বিদেশি ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন আগতরা।
প্রদর্শনী ঘুরে জিপার ও ফেব্রিক খুঁজে দেখছিলেন ক্রেয়নস সোর্সিং লিমিটেডের নামের একটি বায়িং হাউজের মার্চেন্ডাজিং ম্যানেজার কাজী গোলাম কিবরিয়া। অল্প সময়ের মধ্যেই চায়নার নানটং টিয়ানমা গার্মেন্ট এক্সেসরিজ লিমিটেডে পেয়ে যান পছন্দসই পণ্য।
“প্রদর্শনী বলেই এত সহজে সাপ্লায়ার পেয়ে গেলাম। ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন দেশের পণ্য দেখার সুযোগ মিলছে, মান ও দাম তুলনা করে দেখা যাচ্ছে।”
চায়নার নানটং টিয়ানমা গার্মেন্ট এক্সেসরিজ লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি সানি বলেন, “প্রদর্শনীর শুরুতেই ব্যাপক সাড়া মিলছে তাদের। মেইল কিংবা ফোনে যোগাযোগ করার চেয়ে এভাবে সামনাসামনি কথা বলে ভালো ব্যবসা করা সম্ভব।”
“চায়নিজ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আমি ফোনে কথা বলে ফেব্রিক কেনার চেয়ে প্রদর্শনীতে অনেক সহজে যোগাযোগ করা যাচ্ছে,” বলছিলেন আন্তর্জাতিক পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কুয়েনে প্লাস নাগেলের বাংলাদেশ শাখার কর্মকর্তা শামসুল হুদা।
“প্রদর্শনীর আরেকটি উপকারিতা হল, এমন পণ্য ও প্রযুক্তি দেখা যায় যার সম্পর্কে আগে কোনো ধারণা ছিল না।”
ফেব্রিকস আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টিআরজেড গ্রুপের সহকারি ব্যবস্থাপক ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, “ নিত্যনতুন ফেব্রিক আসছে, চায়না যেয়ে ফেব্রিক খুঁজে বের করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আর প্রদর্শনীতে অনেক প্রতিষ্ঠান আসছে বিধাউ একটা প্রতিযোগিতা চলে,যার ফলে আমরা কম দামে ফেব্রিকস কিনতে পারি।”
প্রদর্শনীর আয়োজক সেমস গ্লোবালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, কানাডা, চায়না, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ডসহ ২৫ দেশের ১৮শ স্টল বসেছে এবারের প্রদর্শনীতে।
প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে। সবার জন্য প্রদর্শনী উন্মুক্ত হলেও আগ্রহীদের নির্দিষ্ট একটি ওয়েবসাইট থেকে নিবন্ধন করে নিতে হবে।