প্রথমবারের মতো উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সংলাপে বসল বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
Published : 24 Nov 2022, 11:22 PM
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত কোনো বন্ধু দেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন এ জোটের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নে মোরা বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেইনে আক্রমণ করেছেন এবং একটা অংশ দখলে নিয়েছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এটার নিন্দা জানিয়েছে আর বাংলাদেশ এটার পক্ষে ভোট দিয়েছে।
“কারণ বাংলাদেশ খুব স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে, এটা এমন দেশ যা আন্তর্জাতিক নীতির সাথে চলে। এই গল্পে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আমাদের নীতি।”
ইইউ’র ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মোরা বলেন, “ইউক্রেইন যুদ্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, আমরা এটাকে সম্পূর্ণরূপে শ্রদ্ধা জানাই।
“আমরা বুঝতে পারি, এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের স্বার্থের বিষয় বিবেচনা করেই। আমরা মূলনীতি, নীতি নিয়ে কথা বলতে পারি; ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতে পারি যা করছি তা কেন করছি। কিন্তু আমরা কোনোভাবে কোনো অংশীদারের উপর কোনো অবস্থান চাপিয়ে দেব না।”
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রথমবারের মতো উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সংলাপে বসে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরা নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
দুই ঘণ্টার বেশি সময় আলোচনা চলার পর বিরতি দিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সংলাপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তারা।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ইইউ ও বাংলাদেশ নিজেদের মধ্যে একটি ‘পার্টনারশিপ কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট’ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। সই হওয়ার আগে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চুক্তির বিস্তারিত বিষয়বস্তু ও কর্মপন্থা ঠিক করা হবে।
“এই পার্টনারশিপ কোঅপারেশন এগ্রিমেন্টটা হলে, সেটার কাজ হবে এবং তাদের ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে এটাই হলো ভেহিকল, একটা গুরুত্বপূর্ণ দেশের সাথে। আসিয়ানের প্রধান অর্থনীতিগুলোর সঙ্গে তাদের এই এগ্রিমেন্টটা আছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক বর্তমানে কোন জায়গায় আছে এবং সামনে কোথায় আমরা নিতে চাই, এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করেছি। এই নিতে চাওয়ার সময় এই পার্টনারশিপ কোঅপারেশন এগ্রিমেন্টের কথাটা এসেছে।
সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, “এখানে কনভেনশাল সিকিউরিটি আছে, নন কনভেনশাল আছে, ফুড সিকিউরিটি আছে, সাইবার সিকিউরিটি রয়েছে। আঞ্চলিক ও ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড অপরাধ মোকাবেলার বিষয় আছে, এই বিষয়গুলি সিকিউরিটি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।”
ইন্দো-প্যাসিফিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা, কানেক্টিভিটির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা জানান তিনি।
শাহরিয়ার আলম বলেন, “আমাদের সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আলোচনার একটি অংশ।
“বাংলাদেশের সাথে জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য দেশগুলোর সম্পর্ক, ইউক্রেইনের সমস্যা এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় বাংলাদেশের অবদান-এগুলোর আলোচনা এখনও বাকি রয়েছে।”
খাদ্য ও মেরিটাইম নিরাপত্তা নিয়ে নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেখানে আমরা ফিউচার থ্রেট বা বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যে সমস্যায় পড়ছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়…
“খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনে আরও কী হেল্প করা যায় এবং ২০২৯-এর পরেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আমাদের সম্পর্কের একটি বড় অর্জন যেটি ছিল বা আছে, ২০২৯ পর্যন্ত থাকবে, শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা। এরপরের সময়গুলোতে আমরা কিভাবে আগাতে পারব, সেটাও নিয়ে প্রাথমিক আলাপ হয়েছে।”
এনরিকে মোরা বলেন, এটাই প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ হলো ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে। এখন থেকে প্রতিবছর ঢাকা বা ব্রাসেলসে এই সংলাপ হবে।
“ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করছে, আমাদের সম্পর্কে নতুন পৃষ্ঠা যুক্ত হল। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ যে অভাবনীয় অর্জন করেছে, এর মাধ্যমে আমরা সেটাকে স্বীকৃতি জানাচ্ছি।”