চট্টগ্রাম বন্দরে আটক সূর্যমুখী তেলের চালানে ‘তরল কোকেন’ পাওয়ার ঘটনায় ঢাকা থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে, যারা ওই চালান তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর চেষ্টায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
Published : 30 Jun 2015, 02:53 PM
এই তিনজন হলেন- গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান খান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে আজাদ এবং মোস্তফা কামাল নামের এক ব্যক্তি।
তদন্তকারীরা বলছেন, মোস্তফা কামালের আত্মীয় বকুল এই ‘পাচারচক্রের’ হোতা, যিনি থাকেন যুক্তরাজ্যে। রাজু নামের এক ভারতীয় নাগরিকও এর সঙ্গে জড়িত।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উত্তরায় মণ্ডল গ্রুপের কার্যালয় থেকে আতিককে এবং পরে গুলশান থেকে মোস্তফা কামালকে আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। পরে বিকালে তারা আজাদকে আটকের কথা জানান।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মঈনুল খান জানান, আটক কামাল ও আতিক চট্টগ্রাম বন্দরে আটক কোকেনসহ তেলের চালান ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সঠিক কাগজপত্র না থাকায় খালাস করতে না পেরে ওই চালান তারা ভারতের কলকাতা অথবা উরুগুয়ে পাঠানোর চেষ্টা করেন।
“প্রাথমিক তদন্তে চালানটি সঙ্গে চারটি দেশের মাদকচক্রের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইংল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বকুল ও ভারতীয় নাগরিক রাজু।”
ভোজ্যতেলের ঘোষণায় দেড় মাস আগে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা একটি কন্টেইনারের নমুনা পরীক্ষা করে গত শনিবার তাতে তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা জানায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেড বলিভিয়া থেকে ওই তেল আমদানি করে। কনটেইনারে থাকা ১০৭টি ড্রামের মধ্যে একটিতে পাওয়া যায় তেলে মেশানো তরল কোকেন।
ওই ড্রামের ১৮৫ কেজি সানফ্লাওয়ার অয়েলের এক-তৃতীয়াংশই তরল কোকেন বলে পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সোহেলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের হেফাজতেও নিয়েছে পুলিশ।
ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। কমিটিকে দশ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এরপর চট্টগ্রাম থেকে গোয়েন্দাদের দুটি দল সোমবার ঢাকায় আসে এবং মঙ্গলবার তিনজনকে আটক করেন।
কামাল ও আতিককে আটকের পর দুপুরে ঢাকার সেগুনবাগিচায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন মহাপরিচালক মঈনুল খান।
তিনি বলেন, “কিছু আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। আমরা (শুল্ক অধিদপ্তর) তাদের আরও কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করব।”
শুল্ক গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই কোকেন বাংলাদেশের জন্য আনা হয়নি। তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে পাচারকারীরা।
মঈনুল খান বলেন, “এই কোকেন আমদানির হোতা বকুল ইংল্যান্ডে বসবাস করছে। বকুল তার আত্মীয় মোস্তফা কামালকে এই চালান বন্দর থেকে খালাসের দায়িত্ব দেন। আর তিনি এ কাজে মণ্ডল গ্রুপের কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের সাহায্য নেন।”
এই দুজন তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের কেউ নন বলে জানান তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, “আটক এই দুজন হল তদন্তের প্রথম ক্লু। তাদের দেওয়া তথ্য থেকে হোতাকে ধরতে পারব বলে আশা করছি আমরা।”
এ চক্রের সঙ্গে জড়িত ফজলুর নাম এক ব্যক্তির নামও শোনা যাচ্ছে জানিয়ে তার বিষয়ে তদন্তে কোনো তথ্য মিলেছে কি না জানতে চান এক সাংবাদিক।
এর জবাবে মঈনুল বলেন, “আমরা যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছি, তাদের সঙ্গে বকুলের যোগাযোগ। বকুলের বাড়ি মৌলভীবাজার। আটক দুজন ফজলুকে চেনেন না।”
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে থাকা কন্টেইনারটি আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। পরদিন গোয়েন্দা পুলিশ, শুল্ক গোয়েন্দা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাহিনী, কাস্টমসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কন্টেইনারে থাকা ভোজ্যতেলের কায়িক পরীক্ষা হয়।
প্রাথমিক পরীক্ষায় ১০৭টি তরল ড্রামের কায়িক পরীক্ষায় তরল কোকেনের নমুনা ধরা না পড়লেও পুলিশের চাপে তা পুনঃপরীক্ষার জন্য ঢাকায় নমুনা পাঠানো হয়। সায়েন্স ল্যাবরেটরি (বিসিএসআইআর) ও বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পরেই একটি ড্রামে কোকেন থাকার কথা নিশ্চিত করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
খাতুনগঞ্জের খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে কন্টেইনারটি আমদানি করা হলেও বন্দরে তাদের কেউ এর মালিকানা দাবি করেনি। এর মালিক নূর মোহাম্মদ পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।