রাজধানীতে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নির্যাতিত গারো তরুণী।
Published : 28 May 2015, 08:02 PM
গত ২১ মে রাতে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় পাশবিকতার শিকার মেয়েটি এখনো ‘ট্রমা’ কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসার পর এখন তাকে রাখা হয়েছে নির্যাতিত নারীদের জন্য পুলিশের বিশেষায়িত ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে’।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আগের রাতে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
“দেখা করার সময় তাকে দুজনকে আটক করার কথা জানিয়েছি। মেয়েটি জড়িতদের কঠিন শাস্তি চেয়েছে, ফাঁসি চেয়েছে।”
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
তবে ন্যায়বিচার পাবেন কি না তা নিয়ে এখনো সংশয়ে গারো তরুণীটির পরিবার।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করে বৃহস্পতিবার পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ায় কিছুটা আশ্বস্ত হলেও ভবিষ্যতে মামলার ফাঁক-ফোকর গলে অপরাধীরা যাতে বেরিয়ে আসতে না পারেন সেদিকে খেয়াল রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
নির্যাতিত তরুণীর বড় বোন বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনো বুঝতে পারছি না। পুলিশ দুইজনকে ধরেছে। এটি তো অগ্রগতি। তবে জানি না সবকিছু মিলিয়ে সামনে কী হবে।”
কেউ তাদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভয়ভীতি এখন পর্যন্ত দেখায় নাই। তবে রাস্তাঘাটে কিছু কিছু কথা শুনতে হয়েছে।”
অবশ্য এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি তিনি।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পাঁচজন ধর্ষকের কথা বলা হলেও আশরাফ ওরফে তুষার ও জাহিদুল ইসলাম লাভলু নামে গ্রেপ্তার দুজন মাইক্রোবাসে আর কারও থাকার কথা স্বীকার করেননি বলে র্যাব জানিয়েছে।
অপরাধী পাঁচজন না দুজন ছিলেন সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট নয় ওই তরুণীর পক্ষে আইনি সহায়তা দেওয়া সংস্থাগুলির অন্যতম বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
“এই বিষয়টি এখনো ক্লিয়ার না। ওর সঙ্গে আস্তে-ধীরে আরও সময় নিয়ে কথা বললে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। মেয়েটি তো এখনো পুরোপুরি ‘ট্রমা’ থেকে বের হতে পারেনি।”
আইনি সহায়তার পাশাপাশি সংস্থার পক্ষ থেকে নিয়মিত মেয়েটির খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে এবং তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও মানসিকভাবে এখনো তিনি পুরোপুরি ‘স্বাভাবিক’ নন বলে জানান এই আইনজীবী।
তবে সঞ্জীব দ্রং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “বুধবার রাতে মেয়েটির সঙ্গে সরাসরি কথা হয়েছে। গাড়ির মধ্যে দুই জনই ছিল বলে সে জানিয়েছে।
“হয়ত ঘটনার দিন অত রাতে ১২ ঘণ্টা ধরে এতগুলি থানা ঘুরে ওরকম মানসিক অবস্থায় সংখ্যায় কিছুটা বিভ্রান্তি হয়েছে। এছাড়া পুলিশ তো প্রথমে মামলা নিতেও চায়নি। একটা মানসিক চাপ ছিল মেয়েটির ওপর।
“চলন্ত গাড়িতে দুই জন থাকলেও পুলিশ এ ঘটনার পরিকল্পনায় আরও দুইজন জড়িত থাকার কথা ভাবছে। হয়ত সেটাই সঠিক।”
যমুনা ফিউচার পার্কের একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী ওই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে তুষার ও লাভলুকে ঢাকা ও পটুয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
পরদিন তাদের সংবাদ সম্মেলনে হাজির করে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, তুষার ও লাভলু দুজনেই একটি বায়িং হাউজে গাড়িচালকের কাজ করেন। পরিকল্পনা এঁটে ‘চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে’ মেয়েটিকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন।
এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার আদালতের অনুমতিতে তাদের ১০ দিনের হেফাজতে পেয়েছে ভাটারা থানা পুলিশ।