মালয়েশিয়া থেকে আসার পর বিমানবন্দরে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ গ্রহণ করতে একটি প্রতিনিধি দল ঠিক করেছে বিএনপি।
Published : 26 Jan 2015, 07:03 PM
খালেদা জিয়ার ছেলে কোকোর মৃত্যু
লন্ডনে কোকোর গায়েবানা জানাজায় তারেক
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলের মরদেহ আসার আগের দিন সোমবার বিএনপির পক্ষ থেকে একথা জানানো হয়।
মালয়েশিয়া বিএনপির নেতা মাহবুব আলম শাহ টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মঙ্গলবার সকালে আরাফাতের কফিন দেশে পাঠানো হবে।
খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় মালয়েশিয়া থেকে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বিমানে আরাফাতের কফিন ঢাকায় পৌঁছাবে।
এরপর বিএনপির প্রতিনিধি দল তা গ্রহণ করে গুলশানের কার্যালয়ে নিয়ে যাবে। আরাফাতের মা খালেদা জিয়া সেখানেই রয়েছেন।
গুলশানের কার্যালয়ে নেতারা আরাফাতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর জানাজার জন্য কফিন নেওয়া হবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। সেখানে জানাজার পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কিছুক্ষণ রাখা হবে কফিন।
আসরের নামাজের পর বনানী সামরিক কবরস্থানে আরাফাতকে দাফন করা হবে বলে বিএনপির বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন।
নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, “বনানী সেনা কবরস্থানে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ দাফন পাওয়ার প্রাপ্য। উনি একজন সাবেক সেনা প্রধান ও মেজর জেনারেলের ছেলে।
“প্রচলিত নিয়মে তাকে (কোকো) সেখানে দাফন করতে আমরা সব আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষ করেছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সেখানে কোকোর দাফনের অনুমতি পাব। তার দাফন সেখানেই হবে।”
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার বাইরে আরাফাতের গায়েবানা জানাজা হবে। সারাদেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের এই জানাজায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রিজভী।
আরাফাতের মৃত্যুতে সোমবার থেকে বিএনপির তিন দিনের শোক পালন করছে। দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলণের পাশাপাশি অর্ধনমিত রয়েছে দলীয় পতাকা। নেতা-কর্মীরা পরছেন কালো ব্যাজ।
এছাড়া এই তিন দিন সারাদেশের মসজিদে মসজিদে কোরআন খানি ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের উদ্যোগও নিয়েছে বিএনপি।
কুয়ালালামপুরে গত রোববার আরাফাতের প্রথম জানাজা হয়েছে। ছোট ভাইয়ের জন্য সোমবার লন্ডনে গায়েবানা জানাজা পড়েছেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান।
মুদ্রা পাচারের মামলায় ছয় বছর কারাদণ্ডের সাজা নিয়ে মালয়েশিয়ায় থাকা অবস্থায় আরাফাত শনিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর।
স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও দুই মেয়েকে নিয়ে মালয়েশিয়ায় সাত বছর ধরে থাকছিলেন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে।
শোক প্রকাশে ক্রীড়াবিদ-ব্যবসায়ীরা
আরাফাত কোকোর মৃত্যুতে রাজনীতিক ও কূটনীতিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও ক্রীড়াবিদরাও গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে শোক জানিয়ে সই করছেন শোকবইতে।
কার্যালয়ের নিচ তলায় কালো কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত একটি টেবিলে আরাফাতের ছবির সামনে রাখা হয়েছে শোক বই। এছাড়া কার্যালয়ের ফটকে রয়েছে আরেকটি শোক বই, যাতে দলের কর্মীরা সই করছেন।
সোমবার সুইডেন, তুরস্ক, স্পেন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নরওয়ে, কুয়েত, ওমান, নেপাল, আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডেভলেপমেন্ট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান আরাফাতের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে যান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল ইসলাম হীরা, ফারুক আহমেদ, আকরাম খান, খালেদ মাসুদ পাইলট।
বিসিবির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ নুরুল কবির শাহিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলামসহ একদল খেলোয়াড়ও শোকবইতে স্বাক্ষর করেন।
মাহবুবুর রহমান, লতিফুর রহমান, মীর নাসির হোসেন, রোকেয়া আফজাল রহমান, আনিসুল হক, তপন চৌধুরী, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, এ কে আজাদ, আতিকুল ইসলাম, আসিফ ইবরাহিম, হোসেন খালেদ, আনোয়ারুল আলম পারভেজ, সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মো. আজিম, এসএম মান্নান কচি, হুমায়ুন রশীদ, এস এম ফজলুল হক, কামরান টি রহমান, আবুল কালামসহ ২২ ব্যবসায়ী নেতা একদিন বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যান।
জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদ, মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য টি আই এম ফজলে রাব্বী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী, মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান এ এইচ এম কামরুজ্জামান খাঁন, হিন্দু মহাজোটের সম্পাদক প্রতিভা বাগচী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়াও এসে শোক বইতে স্বাক্ষর করেন। রাতে গুলশানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোকোর দাফন প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান একথা জানান। তিনি বলেন, ‘‘বনানী সেনা কবরাস্থানে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ দাফন পাওয়ার প্রাপ্য। উনি একজন সা্বেক সেনা প্রধান ও মেজর জেনারেলের ছেলে।’’ ‘‘প্রচলিত নিয়মে তাকে (কোকো) সেখানে দাফন করতে আমরা সব আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষ করেছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সেখানে কোকোর দাফনের অনুমতি পাব। তার দাফন সেখানেই হবে।’’