সাভারে ধসে পড়া ভবনের ভেতর থেকে জীবিতদের উদ্ধারে উপর থেকে ছাদ ফুটো করে নিচের দিকে নামছেন উদ্ধারকর্মীরা।
Published : 26 Apr 2013, 08:50 AM
ছোট ছোট এ রকম আটটি সুরঙ্গ পথে বের করে আনা দেহগুলোর মধ্যে কোনোটিতে আছে প্রাণের স্পন্দন, কোনো কোনটি পঁচে ফুলে উঠেছে।
উদ্ধারকর্মীরা জানান, আরো ধসের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে তারা ভারী যন্ত্র ব্যবহার করতে পারছেন না। ড্রিল মেশিন আর রড কাটার যন্ত্র দিয়ে উপর থেকে ধসে পড়া প্রতিটি তলা ফুটো করেই জীবিতদের সন্ধান করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, ভবনটির পুরোপুরি ধূলায় মিশে যাওয়া রোধে ছাদ ফুটো করা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে উদ্ধার অভিযান চালানো যাচ্ছে না। এজন্য ধসে পড়া ভবনের উপর দিকে সাতটি ফুটো করে সুরঙ্গপথে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। উদ্ধারকারীরা কয়েকটি ফুটো দিয়ে তিনতলা পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছেন।
এছাড়া ধসে পড়া তিন তলায় পাশের দেয়াল দিয়ে আরেকটি সুরঙ্গ তৈরি করে অভিযান চলছে।
শুক্রবার সকাল থেকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনা দেহগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেরই প্রাণ নেই। তবে ভবন ধসের দুই দিন পরেও ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার পাচ্ছেন ভাগ্যবান কেউ কেউ। তবে সময় যত গড়াচ্ছে ততই কমছে জীবিত কাউকে উদ্ধারের সম্ভবনা। এর পরেও সকাল থেকে প্রায় ৪০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাবে কর্তব্যরত ডা. হীরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান সকাল থেকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা প্রায় ৪০ জনকে এ হাসপাতালে আনা হয়েছে।
তিনি জানান, কাউকে ঘটনাস্থলেই অস্ত্রোপচার করে হাত-পা কেটে উদ্ধার করা হচ্ছে। কাউকে হাসপাতালে আনার পর জরুরি অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে।
শিল্প পুলিশের ডিজি আবদুস সালাম জানান, সকালে সাভারের বহুতল ভবন ‘রানা প্লাজা’ ধসের প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর সেখানে আটকে পড়া দুই শিল্প পুলিশকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধারকর্মীরা জানালেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে যেসক লাশ বেরুচ্ছে সেগুলোর বেশিরভাগই পঁচে ফুলে গেছে। দুর্গন্ধের মধ্যে সুরঙ্গগুলোতে কাজ করতে এয়ার ফ্রেশনার ছিটাতে হচ্ছে। কোনো লাশ বের করে অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়ার সময়ও এয়ার ফ্রেশনার ছিটাতে হচ্ছে।
জীবিতদের উদ্ধারে আগামী শনিবার সকাল পর্যন্ত ধ্বংসাস্তূপে তল্লাশি চলবে বলে জানিয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক মোহাম্মদ জিহাদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমরা এখনো জীবিত মানুষ পাচ্ছি। ৭২ ঘণ্টা (ভবন ধসের পর থেকে) পর্যন্ত জীবিতদের সন্ধান করবো আমরা।”
এরপর ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে ভবনের ধ্বংসাস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হবে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে সেখানে।
৫৬ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠা নয়তলা ভবন রানা প্লাজা বুধবার সকালে ধসে পড়ে। এতে দোতলা পর্যন্ত দোকান ছিল। ওপরে ছিল পাঁচটি কারখানা।
আগের দিন ওই ভবনে ফাটল দেখা দিলে শিল্প পুলিশ ভবনে কাজ বন্ধ করতে বললেও বুধবার সকালে কারখানাগুলোতে কাজ শুরু হয়। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের কারখানায় ঢুকতে বাধ্য করা হয়।
ধসের সময় ভবনটিতে তিন হাজারের বেশি মানুষ ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এর সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
নয় তলা ওই ভবন ধসে এখন তিন তলার উচ্চতা নিয়ে আছে। একটি তলার সঙ্গে একটি তলা মিশে গেছে। এর মধ্যেই উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।
ধসের পরপরই স্থানীয়দের উদ্যোগে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। পরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সমন্বিত উদ্ধার কাজে নামে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব।