ঢাকার শ্যামলীতে এগার দিন আগে একটি মোটর সাইকেলের বিক্রয় কেন্দ্রে ডাকাতির ঘটনার ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
Published : 24 Oct 2021, 05:05 PM
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলছেন, মোহাম্মদপুর এলাকার একটি ‘চক্র’ দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি করেও টাকা না পেয়ে ‘ইডেন অটোস’ নামের ওই দোকানে ডাকাতি করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে জহির (৩৩), মো. জসিম উদ্দিন (৩৪), মো. জাহিদুল ইসলাম শিকদার (২৬), মো. খায়রুল ভূঁইয়া (২০), মো. রাকিব হাসান (২০) ও মো. নয়ন (২৮)।
শনিবার রাতে কেরানীগঞ্জ ও ধামরাই থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে রোববার কারওয়ানবাজারে র্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
কমান্ডার মঈন বলেন, জহিরুল এ চক্রের ‘হোতা’। অভিযানে ‘ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত’ চারটি চাপাতি এবং লুট হওয়া এক লাখ ৯৩ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে র্যাব।
১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় শ্যামলীর মিরপুর সড়কে উত্তরা মটরসের ডিলার ‘ইডেন অটোস’ নামের ওই দোকানে ডাকাতি হয়।
ডাকাতরা বিক্রয় কেন্দ্রের ম্যানেজার ওয়াদুদ সজীব এবং মোটর মেকানিক নুরনবী হাসানকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে এবং কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ক্যাশ ড্রয়ার ভাংচুর করে। তারা ক্যাশ থেকে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং কম্পিউটার মনিটর নিয়ে যায় বলে সে সময় অভিযোগ করেন দোকান মালিক আবদুল খালেক।
কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তাররা মোহাম্মদপুরকেন্দ্রিক একটি ‘সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের’ সদস্য। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮ থেকে ১০ জন। তারা সবাই ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে এবং পরস্পরের পরিচিত।
চাঁদা না দিলে বিভিন্নভাবে ‘হুমকি’ দেওয়া হত জানিয়ে র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, টাকা না পেলে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ‘হামলা ও ডাকাতিও’ করত ওই চক্র।
কমান্ডার মঈন বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বেশ কয়েক মাস ধরে একজন পলাতক সন্ত্রাসীর নামে ইডেন অটোসে চাঁদা দাবি করে আসছিল তারা। হুমকি দিয়েও চাঁদা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে তারা সেখানে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে। ১১ অক্টোবর ঢাকা উদ্যান এলাকায় জসিমের বাসায় জহির, জাহিদ, নয়ন, খায়রুল ও রাকিব বৈঠক করে।
“সে অনুযায়ী জসিম ও জহির ঢাকা উদ্যান কাঁচাবাজার থেকে চারটি চাপাতি কেনে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১২ অক্টোবর তারা ওই শো-রুমে ডাকাতি করতে যায়।”
সেদিন কীভাবে তারা ডাকাতি করেছিল, সেই বিবরণ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “জাহিদ, জহির, রাকিব ও খায়রুল চাপাতি নিয়ে শো-রুমে প্রবেশ করে। নয়নও তাদের সাথে ছিল। আর জসিম শো-রুমের বাইরে ওয়াচম্যান হিসেবে অবস্থান নেয়।
“জহির শো-রুমে প্রবেশ করেই ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য চাপাতি দিয়ে ম্যানেজার সবুজকে আঘাত করে এবং রাকিব মোটর মেকানিক হাসানকে আঘাত করে। অন্যরা শো-রুমে ভাংচুর করে। জাহিদ চাপাতি নিয়ে শো-রুমের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে কাচের দরজা ভেঙে ক্যাশিয়ারকে ভয়ভীতি দেখায় এবং ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা লুট করে। খায়রুল একটি ডেস্কটপের মনিটর নিয়ে নেয়।”
পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের মধ্যে ডাকাতি করে তারা বের হয়ে যায় জানিয়ে মঈন বলেন, “শো-রুম থেকে বের হয়ে জহিরকে সঙ্গে নিয়ে জাহিদ লেকসিটিতে জাহিদের বাসায় যায় টাকা নিয়ে। পরে সবাই ভাগের টাকা নিয়ে অত্মগোপনে চলে যায়।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জসিম এই চক্রের ‘সমন্বয়কারী’। ঢাকা উদ্যান এলাবায় একটি কোম্পানিতে পিয়নের চাকরির আড়ালে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজির মত অপরাধ চালিয়ে আসছিলেন তিনি।তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় চাঁদাবাজি এবং জমি দখলের মামলা রয়েছে।
জাহিদুল শিকদার অস্থায়ী ভিত্তিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তিনি একজন ‘মাদকসেবী’। তাকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ছিনতাইয়ের অভিযোগে এর আগে কয়েকবার গ্রেপ্তার করেছে।
খাইরুল ভূঁইয়া মাঝেমধ্যে অটোরিকশা চালান জানিয়ে র্যাব বলছে, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে অটোরিকশা চুরির সঙ্গেও তিনি যুক্ত। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ডাকাতি ও মাদকের দুটি মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার জহির ও নয়নও চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।