করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারা দেশে জারি করা লকডাউনের বিধিনিষেধের পঞ্চম দিন রাজধানীর সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল আরও বেড়েছে।
Published : 27 Jul 2021, 01:23 PM
মঙ্গলবার রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন, বিজয়নগর ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে রিকশার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যানবাহন, পণ্যবাহী যান চলছে।
নয়া পল্টন লেইনের গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা সুবিদ আলী নামের একজন বললেন, “দেখেন, মনে হবে না ঢাকা শহরে লকডাউন চলছে। যেভাবে মানুষজন যাতায়াত করছে, তাতে লকডাউন কাগজে কলমেই কঠোর।”
তবে মালিবাগের রেলগেইট ও শান্তিনগর বাজারে মানুষের ততটা ভিড় নেই। যারা আসছেন, বাজার করে তারা দ্রুতই বাসায় ফিরছেন।
“বাজারে ভিড় অত বেশি নেই। কিন্তু বাসা থেকে এটুকু পথ আসতে দেখলাম রাস্তায় প্রচুর মানুষ। এটা ভালো লক্ষণ নয়। দেখেন রিকশা তো গুনে শেষ করতে সময় লাগবে। রাস্তায় প্রাইভেট কারও চলছে। এরকম হলে লকডাউন দিয়ে কি হবে?”
কাকরাইলের মোড়ে দেখা গেল রিকশার জটলা। পুরো সড়ক জুড়ে রিকশার বিচরণ। কেউ যাত্রী নিয়ে আবার কেউবা খালি রিকশা নিয়ে চলছে।
কাকরাইলের কাছে একটি ফার্মেসির সেলসম্যান শিহাব আহমেদ বললেন, “রিকশা আজকে বেশি দেখছি। এত রিকশা যে পুলিশও আর কিছু বলছে না। রিকশা চলাচল লকডাউনের আওতামুক্ত রাখায় মানুষজনের চলাচলও বেড়ে গেছে।”
মোহাম্মদপুর এলাকায় মঙ্গলবার সকালের দিকে গাড়ি চলাচল তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও পায়ে হেঁটে চলা মানুষের সংখ্যা বেশি ছিল।
সবারই ভাষ্য, তারা প্রয়োজনী কাজেই বের হয়েছেন। অনেকের হাতে প্রেসক্রিপশন বা এক্সরে ফিল্ম। আল্লাহ করিম মার্কেটের সামনে পুলিশ দেখা গেলেও পথচারি বা গাড়ি আটকে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে দেখা যায়নি।
মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচা বাজারে ক্রেতা কম থাকলেও কেউ কেউ সদাই কিনতে আসছেন বলে জানালেন মাছ বিক্রেতা আলাউদ্দিন।
মাংসের বাজারে গরুর সংখ্যা কম, তবে খাসি জবাই করে ঝুলিয়ে রেখে বিক্রির আশায় বসে আছেন সালাউদ্দীন নামের এক বিক্রেতা।
মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরি রোড মূলত ব্যবসা কেন্দ্র। এই সড়কে সব ধরনে দোকান রয়েছে। এসব দোকান বাইরে থেকে বন্ধ মনে হলেও দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকছেন বিক্রেতাদের কেউ। লোকজন দেখলে কাছে এসে জানতে চাইছেন- কী লাগবে। ক্রেতা পাওয়া গেলে সতর্কতার সাথে দোকানে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরে ক্রেতা মালামাল নিয়ে বের হয়ে চলে যাচ্ছেন।
এই কৌশলের বিষয়ে প্রশ্ন করলে টাইলস ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বললেন, “কী করব, এভাবেই এ কয়দিন ব্যবসা চালাতে হবে।”
ধানমণ্ডি, সাত মসজিদ রোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার প্রধান সড়কে রিকশা ও মানুষের চলাচল বেড়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহলও দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টি হলেও থেমে নেই মানুষের বের হওয়া, সকাল থেকেই নিত্য প্রয়োজনীয় দোকান খুলেছে।
অলিগলিতে ভ্যানগাড়িতে ফল আর সবজির পসরার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের আনাগোনা; মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।
আজিমপুর চৌরাস্তায়, বকশিবাজার, চানখারপুলে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেলেও আগের মত কড়াকড়ি নেই।
ঈদের আগে লকডাউনের বিরতি দেওয়ায় ঝুঁকি বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সোমবার একই দিনে শনাক্ত রোগী আর মৃত্যুর পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে গেছে।
নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৭ জনে। আর আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১৯ হাজার ৫২১ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস।