ঈদের ছুটি শেষে সারা দেশে আবার শুরু হয়েছে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের কঠোর বিধিনিষেধ; যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা।
Published : 23 Jul 2021, 02:23 PM
সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী কিছু বাহন ছাড়া চলছে শুধু রিকশা আর ভ্যান। তবে রিকশার সংখ্যাও অন্য দিনের তুলনায় কম।
ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই ‘কঠোর লকডাউনে’অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। বিধিনিষেধ মানাতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সঙ্গে সেনাবাহিনীও মাঠে আছে।
শপিংমল, মার্কেটসহ সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ। জরুরি সেবার দপ্তর বাদে অফিস-আদালত আর শিল্পকারখানাও বন্ধ রাখা হয়েছে। ৫ অগাস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ চলবে।
তবে কোরবানির পশুর চামড়া সংশ্লিষ্ট খাত, খাদ্যপণ্য এবং কোভিড-১৯ প্রতিরোধে পণ্য ও ঔষধ উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান বিধিনিষেধের আওতায় বাইরে থাকছে। পাশাপাশি রোববার থেকে সীমিত পরিসরে চলবে ব্যাংকিং কার্যক্রম।
তবে ঢাকা সদরঘাটের চিত্র ছিল ভিন্ন। দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে লঞ্চে করে এসে ভোরে যারা ঢাকা সদরঘাটে পৌঁছেছেন, যানবাহন না পেয়ে তাদের পড়তে হয়েছে বিপাকে।
অনেকেই বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে রওনা হয়েছেন বাসার পথে। ভাগ্যবান কেউ কেউ রিকশা বা ভ্যানে উঠতে পারলেও গুনতে হয়েছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া।
পরিবার নিয়ে পায়ে হেঁটেই রামপুরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন বরিশাল থেকে আসা রফিক উদ্দিন।
পটুয়াখালী থেকে আসা ফরিদা আখতার ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে কোনোমতে একটি রিকশা ভ্যানে উঠতে পেরেছেন। তিনি যাচ্ছেন মালিবাগের চৌধুরীপাড়ায়।
বিরক্তির সঙ্গে তিনি বললেন, “এমন হইলে কালকে লঞ্চ ছাড়ল কেন? আমরা কীভাবে যাব? জায়গায় জায়গায় পুলিশ আটকাইতেছে। কোনো কিছু শুনতে চায় না তারা।”
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকে বসেছে চেকপোস্ট। ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করতেও দেখা গেছে অনেককে। একটু পর পর টহল দিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বাহিনীর গাড়ি।
পুরান ঢাকার লালবাগ, বকশিবাজার, আজিমপুর, মালিবাগের চৌধুরী পাড়া, শান্তিবাগ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডির বিভিন্ন অলিগলিতে রিকশা ছাড়া মানুষজনের চলাচল একেবারেই কম। ফার্মেসি আর মুদি দোকান ছাড়া অন্য কোনো দোকানপাটও খোলেনি।
ভ্যানগাড়িতে নানা ধরনের শাক-সবজি নিয়ে অলিগলিতে বসেছেন বিক্রেতারা; তবে ক্রেতা পাচ্ছেন না খুব একটা।
মোহাম্মদপুরের অলিগলিতে কিছু রিকশা ও ভ্যান চললেও সংখ্যা একেবারেই কম। টাউন হল বাজারে মুদি দোকানসহ কিছু দোকানপাট খোলা দেখা গেছে।
আদাবর থানার পরিদর্শক ফারুক মোল্লা বললেন, “নানা কারণ দেখিয়ে রিকশা বের করছে। তাদেরকে বোঝানো হচ্ছে। একান্তই না পারলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
আটিবাজার থেকে ধানমন্ডি এলাকায় দুধ বিক্রি করতে আসা আফতাব উদ্দিন জানালেন, রাস্তায় যানবাহন তেমন নেই, শুধু রিকশা দেখেছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার শহীদ মিনার সড়ক ধরে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে সকালে। আজিমপুর চৌরাস্তায, বকশিবাজার, চানখারপুলে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে পলাশীর মোড়ে পুলিশ ছিল না।
বিধিনিষেধে যা মানতে হবে
যা কিছু বন্ধ
>> সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ । তবে সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলের এলাকায় অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজ ভার্চুয়ালি সম্পন্ন করবেন।
>> সব প্রকার শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে, যা আগে লকডাউনের মধ্যে খোলা রাখার অনুমতি ছিল।
>> সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
>> শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
>> সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
>> জনসমাবেশ হয় এই ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
যা কিছু খোলা
>> আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার৷ বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া, জাতীয় পরিচয় পত্র (এন আই ডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে চলাচল করতে পারবে।
>> জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, নৌযান, পণ্যবাহী রেল ও ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। ফেরিতে কেবল পণ্যবাহী গাড়ী ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার করা যাবে।
>> খাদ্য ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ মিল কারখানা; কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ঔষধ, অক্সিজেন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্প লকডাউনে খোলা থাকবে।
>> কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা-বেচা করা যাবে।
>> খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শুধু খাবার বিক্রি (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।
>> বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল বন্দর এবং সংশ্লিষ্ট অফিস নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
সাধারণ চলাচল
>> অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন /সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
>> তবে যারা করোনাভাইরাসের টিকার তারিখ পেয়েছেন, তারা টিকা কার্ড দেখিয়ে নির্ধারিত দিনে টিকাকেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারবেন।
>> আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমনের টিকেট দেখিয়ে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।
অন্যান্য
>> বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকতার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
>> ২৫ জুলাই থেকে ব্যাংকে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত। তবে লেনদেন পরবর্তী অন্যান্য কাজের জন্য ৩টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা রাখা যাবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
>> বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
>> স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশ দেবে।
>> ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারেরর সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
>> জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র , পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
>> জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবে।