ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে মামলায় কারাগারে থাকা লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়েছে, সেই মামলায় বন্দি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন আদালত নাকচ করে দিয়েছে।
Published : 28 Feb 2021, 12:54 PM
পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম রোববার এ আদেশ দেন।
কিশোরের অনুপস্থিতিতেই এদিন আদালতে রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হয়।
কিশোরের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আসামিকে হাজির না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালতের কাছে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি চান।
পাশাপাশি যে মামলায় একবার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, সেই মামলার আসামিকে রিমান্ডে নিতে পুলিশের ওই আবেদনের এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জ্যোতির্ময়।
শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। এদিন কিশোরের জামিনের জন্য কোনো আবেদন ছিল না।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে গতবছর ৫ মে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং অনলাইনে লেখালেখিতে সক্রিয় ব্যবসায়ী মুশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।
পরদিন ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই জামশেদুল ইসলাম তখন বলেছিলেন, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ নামের ফেইসবুক একাউন্টে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। আর মুশতাক তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেন।
র্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিকের করা এই মামলায় রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠন দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে পরে এ দুজন জামিনে মুক্তি পান।
মুশতাক ও কিশোরের পক্ষে বেশ কয়েকবার জামিনের আবেদন হলেও তা আদালতে নামঞ্জুর হয়।
এই মামলায় আসামির তালিকায় মুশতাক, কিশোর, দিদার, মিনহাজের সঙ্গে আরও ছিলেন নেত্র নিউজের সম্পাদক সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিল, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, হাঙ্গেরি প্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (আল জাজিরার প্রতিবেদনের স্যামি), আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার।
তবে তদন্তের পর শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে গত ১৩ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয় রমনা থানা পুলিশ। বাকি আট আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন এ মামলায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
সেই দায়িত্ব পাওয়ার পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপপরিদর্শক ও মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আফছর আহমেদ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
সেই শুনানি হওয়ার আগেই গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়।
মুশতাকের মৃত্যুতে প্রতিবাদ হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি নতুন করে জোরালো হয়ে উঠেছে।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আহমেদ কবির কিশোর ও মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে রাষ্ট্রবিরোধী ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করার অভিযোগ রয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য ‘আই অ্যাম বাংলাদেশ’ ফেইসবুক পেইজটি পরিচালনায় জড়িতদের উদ্দেশ্য জানতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।