দেশে তামাকের ব্যবহার কমাতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের আশ্বাস দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কিছু দুর্বলতা থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।
Published : 05 Jan 2021, 12:56 AM
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা এবং এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে তুলে ধরতে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র একটি প্রতিনিধি দল সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
সাক্ষাৎকালে মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ধাপে ধাপে কঠোরতা আরোপ করা হবে।
“ইতোপূর্বে তামাকপণ্যের প্যাকেটে ছবি ব্যবহার ছিল না, সেটি করা হয়েছে। পাশাপাশি এক সময় বিমানসহ বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে ধূমপানের সুযোগ ছিল। আইন করে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনটি আরও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আইনের সংশোধনী আনা হচ্ছে।”
এ সময় তিনি প্রজ্ঞা এবং আত্মা’র প্রস্তাবগুলো আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার করবেন বলে আশ্বাস দেন।
প্রজ্ঞা ও আত্মার পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মন্ত্রীর কাছে ছয়টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবগুলো হল-
>> ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্তসহ সব পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।
>> বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
>> বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করা।
>> ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসের (এইচটিপি) মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
এবং
>> সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সম্মেলনে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন।
তিনি বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন ও পরবর্তীতে এর যথাযথ সংশোধন করে সরকার। বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ আবারও আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে এ ধরনের জরিপের ফলাফল আইন সংশোধনে সহযোগিতা করবে। যদি সকলের সমান ইচ্ছ শক্তি ও সহযোগিতা থাকে তাহলে ২০৪০ সালের পূর্বেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব।”
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সংক্রান্ত কার্যক্রম সফল হওয়ার পরেই তামাকজাত দ্রব্যের বিষয়টি নিয়ে জোরালোভাবে কাজ শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন সচিব।
তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য, বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাক কোম্পানিগুলো যে সব প্রচারণা কৌশল অবলম্বন করছে, সে সংক্রান্ত ‘বিগ টোব্যাকো টাইনি টার্গেট বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি জরিপ পরিচালনা করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। সহযোগিতায় ছিল ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের হেলথ ও ওয়াস সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোস্তফিজুর রহমান, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব রেজাউল করিম সরকার, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এপিডেমিওলোজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সোহেল রেজা চৌধুরীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।