ভৌগলিক অবস্থানের সুবিধা কাজে লাগানো গেলে প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের সংযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ একটি ‘আদর্শ জায়গা’ হতে পারে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 01 Oct 2020, 05:34 PM
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচ্যের সাথে পাশ্চাত্যের যে সংযোগটা, বাংলাদেশ তার জন্য সব থেকে আদর্শ একটা জায়গা হতে পারে, যদি আমরা সেইভাবে উন্নত করতে পারি।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ‘প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন জানিয়ে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ইউরোপে সুইজারল্যান্ডের যে অবস্থান, ইউরোপের একদিক থেকে আরেকদিকে যেতে হলে সুইজারল্যান্ডের ভেতর দিয়েই যেতে হয়।
“আমাদের বাংলাদেশের অবস্থানটা… আমরা ইন্টারন্যাশনাল এয়াররুটের ভেতরে আছি। সেখানে আমাদের সামনে অনেক সম্ভাবনা আছে। সেই সম্ভাবনাটাকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমাদের একদিকে পর্যটন শিল্প, অপরদিকে আমাদের এয়ারলাইন্স আমাদের অনেক টাকা উপার্জন করে দিতে পারে।”
ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে পানি ভবন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ম্যুরাল’ এবং বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের নবনির্মিত প্রধান কার্যালয় ‘পর্যটন ভবন’ এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বিমানের উন্নয়নে কাজ শুরু করেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু পরবর্তীতে যারা এসেছেন… একখানা বিমান কিনে কয় টাকা তারা পকেটে ভরবেন,কত কমিশন খাবেন সেটাই ছিল তাদের মাথায়।”
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নাজুক অবস্থার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “১৯৯৬ সালের আগেও আপনারা যারা বিমানে চড়েছেন, একবার চিন্তা করেন, সেখানে কী দুরাবস্থাটা ছিল। বিমানে চড়লে কোনো রকমের এন্টারটেইনমেন্টের ব্যবস্থা ছিল না।
“আমি তো বেশিরভাগই নিজেদের দেশের বিমানে চলাচল করতাম। কিছুদূর যাওয়ার পরে গায়ে পানি পড়ত উপর থেকে, সেখানে তোয়ালে, টিস্যু দিয়ে পানি... এমন একটা অবস্থা ছিল।”
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিমানের সেবার মানের উন্নয়ন, নতুন বিমান কেনা, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি এবং বিমানবন্দরগুলোর আধুনিকায়নে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।
সরকার সারা দেশে আকাশপথসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে জনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যোগাযোগ ব্যবস্থা যত সহজ হবে, দেশের অর্থনীতি তত গতিশীলতা পাবে, উন্নত হবে। মানুষের যাতায়াত সহজ হবে।”
তিনি বলেন, বিমানের জেট ফুয়েল যাতে লাইপলাইনের মাধ্যমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যায়, সে ব্যবস্থা সরকার করে দিচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিমান যেন যেতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে।
“আজকে দেখলাম যে আমেরিকার সাথে একটা চুক্তি হয়েছে, যেখানে আমাদের বিমান যেতে পারবে। আমরা যখন বোয়িং বিমানগুলো কিনি তখন থেকে এটা একটা প্রচেষ্টা ছিল, যে আমরা যেন আমেরিকায় আমাদের বিমান নিতে পারি বা আমরা একটা যোগাযোগ করতে পারি। সেখানে আমাদের অনেক বাঙালি বসবাস করেন।”
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটনের ‘বিশাল সম্ভাবনার’ কথা তুলে ধরে এর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
অনুষ্ঠানের গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আর পানি ভবন মিলনায়তন প্রান্ত থেকে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রান্ত থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মহিবুল হকসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।