নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মসজিদে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, তাদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্য।
Published : 06 Sep 2020, 09:12 PM
এদের কেউ কেউ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি; তাদের এই অবস্থায় এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা।
শিল্প নগরী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে শুক্রবার রাতে এশার নামাজের সময় আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটে।
গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বদ্ধ মসজিদে এই বিস্ফোরণ ঘটে বলে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা।
বিস্ফোরণে আহত অর্ধ শতাধিক জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনার পর রোববার রাত পর্যন্ত একে একে ২৬ জনের মৃত্যু ঘটে।
হাসপাতালটিতে এখনও চিকিৎসাধীন ১১ জন। তাদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেন, “তাদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এর মধ্য ছয়জন আইসিইউতে আছে। আমরা কাউকেই শঙ্কা মুক্ত বলতে পারব না।”
এই রোগীদের স্বজনরা ভিড় করে আছেন বার্ন ইনস্টিটউটে। নিচতলা থেকে পাঁচ তলার অপেক্ষাগারে কেউ নীরবে কাঁদছেন, কেউ বিলাপ করছেন।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের অধিকাংশই তাদের পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কেউ কাজ করতেন পোশাক কারখানায়, কেউ করতেন টিউশনি, কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
মসজিদের সামনের দোকানি আব্দুল আজিজের স্ত্রী আসমা বেগম স্বামীকে দেখে এসে চোখের জলে ভাসছিলেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে তারে চিনতেই পারতেছি না। পা দেখে চিনতে পারছি। চোখ-মুখ ফুলে গেছে, চেনার কোনো উপায় নাই।”
স্বামীর সুস্থতা নিয়ে শঙ্কিত আসমা চোখে ঘোর অনিশ্চয়তা ভবিষ্যৎ নিয়ে।
“ছেলে আবু সায়ীদ মাদরাসায় ক্লাস ফাইভে আর মেয়ে সামিয়া ক্লাস থ্রিতে পড়ে। আমি জানি না, আমার স্বামী বাঁচবেন কি না, বাঁচার পর কিভাবে আমাদের সংসার চলব, কিছুই জানি না। এ আগুন সবকিছু কেড়ে নিছে।”
ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলায় চিকিৎসাধীন ফকির নিউ গার্মেন্টের কর্মী ইমরান হোসেন (৩০) ও তার স্ত্রীর বোনের জামাই আমজাদ।
ইমরানের ছোট ভাই জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুজন এক সঙ্গে নামাজ পড়তে গিয়েছিল। ইমরান ভাই ও আমজাদ ভাইয়ের মধ্যে আমজাদ ভাই আইসিইউতে। শরীর পুরা পুড়ে গেছে, চিনতে পারতেছি না।”
পাশে থাকা আমজাদের স্ত্রী তখন হাউমাউ করে কাঁদছিলেন, আর বলছিলেন- “এখন আমাদের কী হবে? আল্লা কেমনে তুমি আমাদের উপর এমন সর্বনাশ দিলা।”
আমজাদের বাবা আবদুল আহাদ বলেন, “আমার চোখের সামনে দিয়ে একের পর এক লাশ বের হচ্ছে। কিচ্ছু বুঝতে পারতেছি না। আমার জমিজমা যা কিছু সব বিক্রি করে দিব, আমারে আমার ছেলে ফিরায়ে দাও।
“আমার ছেলে গার্মেন্টের গাড়ি চালাইতো। ও রোজগার করে আমারে খাওয়াইতো। আমার ছেলে ফিরায়া দাও।”
করোনাভাইরাস সঙ্কটে কারণে চাকরি হারিয়ে পটুয়াখালীতে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন মো. কেনান। ১০-১২ দিন আগে চাকরির খোঁজে আবার ফিরেছিলেন নারায়ণগঞ্জে, এসেই শুক্রবার মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে আগুনে পোড়েন তিনি।
কেনানের খোঁজ-খবর রাখছেন তার চাচাশ্বশুর মো. আনোয়ার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “সংসারের টানা পোড়নের মধ্যে দুই বছরের বাচ্চা ও বউ বাড়িতে রেখে কাজের জন্য আসছে। এখন কী হবে বুজতেছি না।”
আরও খবর