ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় অভিযুক্ত দুই শিক্ষক নাজনীন আক্তার ও জিনাত আরার জামিন বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
Published : 23 Aug 2020, 02:36 PM
রোববার সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধারিত দিনে আদালতে অনুপস্থিত থাকায় ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম এ আদেশ দেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষী হিসাবে এদিন আদালতে জবানবন্দি দিতে আসেন অরিত্রীর মা বিউটি অধিকারী।
জামিনে থাকা দুই আসামি নাজনীন আক্তার ও জিনাত আরা এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। হাজির না হওয়ার বিষয়ে তাদের আইনজীবীও কোনো আবেদন করেননি।
নিয়ম অনুযায়ী বিচারক দুই আসামির জামিন বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন এবং পরে অরিত্রীর মায়ের সাক্ষ্য শোনেন।
বিউট অধিকারী সাক্ষ্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। শিক্ষকদের ‘অন্যায় অপমানজনক আচরণ ও হুমকির কারণে’ কীরকম মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে অতিত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল, সেই বর্ণনা তিনি আদালতে তুলে ধরেন।
মামলাটিতে আসামি ছিলেন অরিত্রীর শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাও। তবে অভিযোগপত্রে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর আগে গত ২৫ নভেম্বর এ মামলার বাদী অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর জবানবন্দির মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন রাখা হয়েছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. সালাহউদ্দিন হাওলাদার জানান।
২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর শান্তিনগরের বাসায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী (১৫)। তার আগের দিন পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগে তাকে পরীক্ষা হল থেকে বের করে দিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, অরিত্রী পরীক্ষায় মোবাইল ফোনে নকল নিয়ে টেবিলে রেখে লিখছিল। অন্যদিকে স্বজনদের দাবি, নকল করেনি অরিত্রী।
এরপর অরিত্রীর বাবা-মাকে ডেকে নেওয়া হয় স্কুলে। তখন অরিত্রীর সামনে তার বাবা-মাকে অপমান করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। ওই দিনই আত্মহত্যা করেন অরিত্রী।
অরিত্রীর আত্মহত্যার পর তার সহপাঠিদের বিক্ষোভে নামে, ৪ ডিসেম্বর তার বাবা দিলীপ অধিকারী আত্মহননে প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা করেন। ওই মামলায় অরিত্রীর শিক্ষকদের পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পরে তারা জামিন পান।
গতবছর ২৮ মার্চ নাজনীন ও জিনাতকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদার।
এরপর গতবছরের ১০ জুলাই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ধারায় মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।