প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
Published : 15 Mar 2020, 12:07 PM
রোববার দুপুরে বিভিন্ন বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধিদের বৈঠকে সোমবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকের সমন্বয়ে থাকা শিক্ষার্থী তৌসিব মাহমুদ সোহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১১২ জন শ্রেণি প্রতিনিধি অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
আড়াই মাস আগে চীনে সংক্রমণ ঘটার পর বিশ্বের শতাধিক দেশের লাখো মানুষ আক্রান্ত এবং ৫ হাজারের বেশি মৃত্যুর পর বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে।
সংক্রমণ এড়াতে বিভিন্ন দেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেও বাংলাদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, তেমন পরিস্থিতি এখনও হয়নি।
রোববার পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ করে দেওয়ার দাবিতে কয়েক শিক্ষার্থী অনশনে বসেছেন, বুয়েটেও শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যাচ্ছে না।
এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেন।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে তৌসিব মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অনেকে মেসে থাকি। প্রতি তলায় ১০-১২ জন করে থাকি, এক সাথে বসে খাই। একবার কেউ আক্রান্ত হলে বাতাসের চেয়েও দ্রুত ছড়াবে। তখন ক্যাম্পাস বন্ধ করে কোনো লাভ হবে না।”
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাসফিয়া ফারাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত ছোট একটা ক্যাম্পাস, এখানে একজন অসুস্থ হলে সহজেই সবার মাঝে ছড়িয়ে যাবে। আমরা চাই এখনই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হোক। ক্লাস করতে আসাটা জরুরি, বেঁচে থাকাটা তারচেয়েও জরুরি।"
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুক্তাদির রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বলা হচ্ছে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে; তা তো সম্ভব হচ্ছে না।
“ক্যাম্পাসে কতজনকে একসাথে চলতে হয়, বাসে ভিড় ঠেলে আসতে হয়। এভাবে আমরা সহজেই আক্রান্ত হতে পারি। আমরা তো জানি না কে এই ভাইরাস বহন করছে।”
নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ক্যাম্পাসে সচেতনতামূলক তেমন কোনো পদক্ষেপও নেই বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
তারা বলছেন, ওয়াশ রুমগুলোতে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার, টিস্যু, ঝুড়ির মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও করা হয়নি।
রাজীব মণ্ডল নামের এক শিক্ষার্থী বললেন, “ক্যাম্পাসে তো পানি ছাড়া আর কিছু নাই হাত-মুখ ধোয়ার। তাদের উচিৎ ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া।"
ক্যাম্পাস বন্ধের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেখা যাক সরকার কী বলে। সরকারের নির্দেশনার পরে সিদ্ধান্ত নেব।”
পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে নির্দেশনা দেব, যাতে ওয়াশরুমগুলোতে সাবান, হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা করে।”
তৌসিব মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কর্তৃপক্ষ যেহেতু সরকারের নির্দেশনার বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না, আমরাই আমাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছি।
“বিশ্ববিদ্যালয়ের টোটাল ১৬০টা ব্যাচ৷ তার মধ্যে ১১২টা ব্যাচ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের। বাকিরা সন্ধ্যার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে।”