বরিশালে দাদা বাড়িতে লম্বা ছুটি কাটিয়ে কেরানীগঞ্জের মাদ্রাসা ছাত্র মিশকাত আর তার পাঁচ বছরের ছোট বোন নুসরাত যখন ফিরছিল, ওদের মত দাদিরও ছিল মন খারাপ; আর কটা দিন যদি ওরা থেকে যেত!
Published : 21 Jun 2019, 09:54 PM
শুক্রবার সকালে ঢাকা সদরঘাটে এক লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবির পর আবার দাদির কাছেই ওরা ফিরে গেল, তবে কফিনবন্দি হয়ে।
১২ বছর বয়সী মিশকাত কেরানীগঞ্জের শান্ত পাড়া শাহী মসজিদ মাদ্রাসায় পড়ছিল, আর নুসরাত পড়ছিল স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলে। ওদের ছোট বোন নুসাইবার বয়স এখন এক বছর।
ওদের বাবা বাবুল ফরাজী কেরানীগঞ্জ এলাকায় ছোটোখাটো ব্যবসা করেন। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার উত্তমপুর গ্রামে তার পৈত্রিক বাড়ি।
মিশকাতের চাচা মফিজুল ইসলাম জানান, তাদের বাবা (মিশকাতদের দাদা) মারা গেছেন বছর দশেক আগে। এরপর থেকে তাদের মা মজিরন বেগম মাঝেমধ্যে কেরানীগঞ্জে এসে থাকতেন, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাতেন।
কিন্তু ঈদের ছুটি শেষে স্কুল ইতোমধ্যে খুলে গেছে। তাই তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরিশাল থেকে ঢাকার লঞ্চ ধরেন তাদের মা জোসনা বেগম। সঙ্গে ছিলেন তার ভাই শামীম হাওলাদার।
শুক্রবার সকালে ঢাকা সদরঘাটে পৌঁছানোর পর নৌকায় করে কেরানীগঞ্জে যাওয়ার পথেই ঘটে সেই দুর্ঘটনা।
তাদের নৌকা যখন সিমসন ঘাট থেকে রওনা হল, এমভি পূবালী-৫ লঞ্চটি তখন সদরঘাটে যাত্রী নামিয়ে কেরানীগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল নোঙ্গর করার জন্য। ওই সময় সদরঘাটের এক নম্বর পন্টুন বরাবর নদীতে লঞ্চের পেছনের অংশে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায় মিশকাতদের নৌকা।
খবর পেয়ে মিশকাতদের বাবা বাবুল ফরাজী কেরানীগঞ্জ থেকে সদরঘাটে ছুটে আসেন। ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর ডুবুরিদের পাশাপাশি কোস্ট গার্ড ও আইডব্লিউটিএ-এর উদ্ধারকর্মীরা শুরু করেন তল্লাশি।
সদরঘাট নৌ থানার ওসি মো. রেজাউল জানান, এক নম্বর পন্টুন বরাবর নদী থেকে প্রথামে মিশকাতের লাশ উদ্ধার করেন নৌবাহিনীর ডুবুরিরা। কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা কাছাকাছি এলাকায় নদী থেকে নুসরাতের লাশ উদ্ধার করেন।
বিআইডব্লিউটিএ-এর পরিবহন পরিদর্শক মো. সেলিম বলেন, “নৌকাটি লঞ্চের পেছন দিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। মাঝি দেখেশুনে চালালে এটা হত না।”
শুক্রবারই মিশকাত আর নুসরাতের লাশ নিয়ে বাকেরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন পরিবারের সদস্যরা। উত্তমপুর গ্রামে দাদার কবরের পাশেই তাদের দাফন করা হবে বলে চাচা মফিজুল ইসলাম জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “নাতি-নাতনিরা যতদিন বাড়িতে ছিল, খুব খুশি ছিলেন মা। গতকাল ওরা বিদায় নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পরে আমাকে ফোনে বললেন, উনার খারাপ লাগছে।ছেলেমেয়েগুলো আর কয়টা দিন থাকলে উনার ভালো লাগত।… আজকে ওরা আবার দাদির কাছেই যাচ্ছে।”