সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের মিছিল যেখানে যাচ্ছে, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানার নিয়ে সেখানেই হাজির একদল শিক্ষার্থী, যাদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
Published : 18 Sep 2018, 06:55 PM
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনে থাকা ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ মিছিল-সমাবেশের পাল্টায় সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনটিকে এভাবেই সক্রিয় দেখা গেছে।
পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নূরুল হক নূর অভিযোগ করেছেন, তারা যেখানেই গেছেন, ছাত্রলীগও সেখানে অবস্থান নিয়েছে। তাদের কারণে বারবার তাদের সমাবেশের জায়গা বদলাতে হয়েছে।
নূর বলেন, “আমরা সায়েন্স লাইব্রেরির ওখানে যখন ছিলাম তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ধাক্কা দিতে শুরু করে, পরে ওখান থেকে চলে আসি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির দিকে। ওখানেও তারা ছিল তাই আমরা পাবলিক লাইব্রেরির দিকে মিছিল নিয়ে যাই।
“যাবার সময় ওরা মিছিল নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। কিন্তু আমরা একপাশ দিয়ে চলে আসি। এসময় ওরা আমাদের উদ্দেশ্য করে খারাপ ভাষায় স্লেজিং করতে থাকে। সমাবেশ করার জন্য যেখানেই যাচ্ছিলাম সেখানেই ওরা অবস্থান নিয়ে রেখেছে।”
সকাল সাড়ে ১১টায় আন্দোলনকারীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে সমাবেশ করতে চাইলে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের’ দল সেখানে অবস্থান নেয়; তখন কোটা আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে সরে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে গেলে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের’ মিছিলটি সেখানেও যায়।
সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে কোটা না রাখার সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে সেখানে সমাবেশ করে তারা।
এরপর কোটা আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্যে পৌঁছার আগেই সেখানে অবস্থান নিয়ে রাখে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি দল। এখানেও তারা সমাবেশ করে।
এর আগেই কোটা আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে মল চত্বর হয়ে কলাভবনে চলে যান। ততক্ষণে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ মিছিল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের দিকে চলে গেলে কোটা আন্দোলনকারীরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অবস্থান নিয়ে সেখানে সমাবেশ করেন।
‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ও তাদের অনুসারীদের দেখা গেছে। এদের মধ্যে ছিলেন সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন রানা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইয়েদুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ- সম্পাদক ইবনুল হাসান।
‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের’ কর্মসূচিতে থাকা সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কামাল উদ্দিন রানা বলেন, “আমরা তো এই ক্যাম্পাসেরই ছাত্র, চাকরি তো আমাদেরও করা লাগবে।
“সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেক্ষেত্রে আমরা তো অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল করতেই পারি। এখন আমরা আমাদের কর্মসূচি কোথায় পালন করব সেটা তো আমাদের ব্যাপার। এর সাথে কোটার আন্দোলনকারীদের সম্পর্ক নেই।”
নেতাকর্মীদের এই কর্মসূচি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হুসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে ছাত্রলীগের এরকম কোনো কর্মসূচি ছিল না। গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেকোনো কর্মসূচি পালন করতেই পারে।”
কর্মসূচিতে অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিলেন জানালে তিনি বলেন, “আপনিও একজন সাধারণ শিক্ষার্থী, পাশাপাশি সাংবাদিক। যারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করে, তারাও কিন্তু আগে এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কি প্রোগ্রাম করবে তা আমরা তো বলে দিতে পারি না। আর কোটা আন্দোলন যারা করছে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আগে আপনি খুঁজে বের করুন, পরে এখানে ছাত্রলীগের কেউ ছিল কি না তা আমি দেখব।”
দ্রুত প্রজ্ঞাপন, না হয় দুর্বার আন্দোলন
অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশে বক্তব্যে কোটা আন্দোলনের নেতা নূরুল হক নূর বলেন, “আমরা শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য আন্দোলন করিনি। আমরা সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। প্রজ্ঞাপন দ্রুত সময়ের মধ্যে দিয়ে দিন, না হয় বাংলার পুরো ছাত্রসমাজ, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সাথে মতামত বিনিময় করে আবারও দুর্বর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।"
৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবিও জানান তিনি।
আন্দোলকারীদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বলেন, “আমরা আন্দোলন করে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে আমাকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হল থেকে ধরে নিয়ে ককটেল হাতে দিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করেছে।
“আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করেছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছি। আমরা বলে দিতে চাই, কোনো ধরনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবেন না। যতদিন পর্যন্ত কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি না করা হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিলের সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানান।