রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার রুবি ভিলায় অভিযানে নিহত তিন ‘জঙ্গির’ মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়ার কথা জানিয়েছে র্যাব।
Published : 14 Jan 2018, 06:47 PM
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক এমরানুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত শুক্রবার সকালে অভিযান শেষে রুবি ভিলার পঞ্চম তলায় যে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গিয়েছিল, তার মধ্যে একটির সঙ্গে নিহত একজনের আঙুলের ছাপ মিলেছে।
সে অনুযায়ী, ওই জঙ্গির নাম মেজবাহ উদ্দিন। বাবার নাম এনামুল হক, মায়ের নাম তাহমিনা আক্তার। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদরে।
এমরানুল হাসান বলেন, “মেজবার বাবা-মা, ভাই ও স্ত্রীকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। তারা মৃতদেহ দেখলে মেজবাহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।”
আঙুলের ছাপ মিলিয়ে এবং অন্যান্য মাধ্যমে বাকি দুজনের পরিচয়ও জানার চেষ্টা চলছে বলে এই র্যাব কর্মকর্তা জানান।
রুবি ভিলায় অভিযানের ঘটনায় তেজগাঁও থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলাও করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, নিহত ওই তিন তরুণ নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জেএমবির সদস্য। তাদের মধ্যে একজন দুই ভাইকে নিয়ে থাকার কথা বলে রুবি ভিলার পঞ্চম তলার একটি কক্ষ ভাড়া নেয়। সে সময় তিনি জানান, তার নাম জাহিদ, চাকরি করেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে।
কিন্তু অভিযান শেষে ওই ঘর থেকে দুটি পিস্তল, তিনটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), তিনটি সুইসাইড ভেস্ট, ১৪টি ডেটোনেটর, চারটি পাওয়ার জেলের পাশাশি দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করে র্যাব।
দুটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি একই রকম হলেও একটিতে নামের জায়গায় লেখা ছিল জাহিদ, অন্যটিতে সজীব। এ কারণে র্যাবের ধারণা হয়, দুটি এনআইডিই হয়ত জাল।
‘বাংলাদেশ অনেক নিরাপদ’
রোববার সবিচালয়ে ‘ডিজিটাল একসেস কন্ট্রোল সিস্টেম ও ওয়াচ টাওয়ার’ এর উদ্বোধন শেষে জঙ্গি দমন অভিযান নিয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তিনি বলেন, “আমাদের গোয়েন্দারা ভালো কাজ করছে। সর্বোপরি আমাদের দেশের মানুষ জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ চায় না। সেখানেই জঙ্গিরা অবস্থান করার খবর পাওয়া যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে তারা (জনগণ) গোয়েন্দাদের জানিয়ে দিচ্ছে।
“এই জন্য আমরা মনে করছি… সারা বিশ্ব যখন অস্থির হয়ে গিয়েছে্, তখন বাংলাদেশ অনেক নিরাপদ আছে।”
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাত্র কয়েকশ গজ দূরে এভাবে জঙ্গি আস্তানা গড়ে ওঠার বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, “তারা সেখানে দুই-একদিন আগেই উঠেছে। আর আমরাতো তাদের ধরেছি।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, “যে কোনো স্থানেই (জঙ্গিরা) যেতে পারে। আর পিএম কার্যালয়ের চতূ্র্দিকে তো মানুষের যাতায়াত আছে, মানুষের বাড়ি-ঘর আছে, অফিস আদালত আছে।
“প্রশ্ন হল আমাদের গোয়েন্দারা তাদের শনাক্ত করতে পারছে কিনা। পেরেছে বলেইতো তাদের ধরেছি।”
বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ‘ভালো’ কাজ করছেন এবং এ দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলানায় ‘অনেক ভালো’ বলে দাবি করেন তিনি।
ডিআইজি মিজানুর রহমানকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তিনি দুই সাংবাদিককে হুমকি দিচ্ছেন, অথচ পুলিশ জিডি নিচ্ছে না- এমন অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন করা হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
উত্তরে তিনি বলেন, “আমি বিষয়টা শুনেছি। কেন জিডি নেওয়া হয়নি তা আমি দেখব।”
সচিবালয়ে এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে প্রতিদিন বিশ হাজারের বেশি মানুষ যাতায়াত করে। আর তিন হাজারের বেশি যানবাহন প্রবেশ করে।
এ কারণে ১,২ ও ৫ নম্বর গেইটে ব্যাগেজ স্ক্যানার ও আর্চওয়ে বসানো হয়েছে। সচিবালয়ের স্থায়ী কর্মীদের জন্য ইতোমধ্যে ‘ইলেক্ট্রনিক একসেস কন্ট্রোল সিস্টেম’ এর আওতায় স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে।
৪১৯টি সিসিটিভি ক্যামেরা ও রেকর্ডিং সিস্টেমের মাধ্যমে সচিবালয়ের ভেতরে এবং সীমানা প্রাচীরের বাইরে মানুষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এছাড়া সাতটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে সচিবালয়ের নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “শিগগির ভেহিকল স্ক্যানার বসানোর কাজও শুরু হবে।”