সন্তান প্রসবের সময় প্রসূতির পেটে গজ রেখেই অস্ত্রোপচারের ঘটনায় ভুয়া চিকিৎসক রাজন দাসকে বাউফল থানা পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 11 Dec 2017, 05:34 PM
রাজন দাসের আসল নাম অর্জুন চক্রবর্তী। সোমবার হাই কোর্টে হাজির হলে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চ তাকে পুলিশে সোপর্দ করার নির্দেশ দেন।
আদালত প্রথমে ওই ভুয়া চিকিৎসক, ক্লিনিকের পরিচালক, নার্স ও চিকিৎসকের সহকারীর বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিল।
পরে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন খবর নিয়ে জানতে পারে, বাউফল থানায় এ বিষয়ে রাজন দাসের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে মামলা হয়েছে।
বিষয়টি আদালতেকে জানানো হলে হাই কোর্ট তখন রাজন দাসকে বাউফল থানার মামলায় প্রেপ্তার দেখিয়ে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করতে বলে। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ ও বাকিদের বিষয়ে আদেশের জন্য ১৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শশাঙ্ক শেখর সরকার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জেসমিন সামসাদ।
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শামসুদ্দিন বাবুল। ভুল অস্ত্রোপাচারের শিকার বরিশালে মাকসুদা বেগমের পক্ষে শুনানি করেন ইমরান এ সিদ্দিক। ক্লিনিকের পরিচালক ও নার্সের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম।
চিকিৎসকের সহকারী তোফায়েল সিকদারের (মিশু সিকদার) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আইলাদ হোসেন। আর ভুয়া চিকিৎসক রাজন দাসের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন নুরুল ইসলাম সুজন ও গোলাম নবী।
ওই চিকিৎসকের লাইসেন্স ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে হাই কোর্টে হাজির করতে এর আগে বাউফল থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
পরে ১৫ নভেম্বর বাউফল থানার ওসি আদালতকে জানায়, চেষ্টা করেও তারা রাজন দাসকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি।
আদালত ওইদিন রাজন দাসকে গ্রেপ্তারে প্রয়োজনে র্যাবের সহযোগিতা নিতে বলেন ওসিকে। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই ভুয়া চিকিৎসককে আদালতে হাজির করতে বলা হয়।
সেই ভুয়া চিকিৎসক নিজেই সোমবার আদালতে আত্মমর্পণ করলে হাই কোর্ট তাকে পুলিশে সোপর্দ করার নির্দেশ দেয়।
পটুয়াখালীর নিরাময় ক্লিনিকের পরিচালক আব্দুর রহমান, ভুয়া চিকিৎসকের সহকারী তোফায়েল সিকদার ওরফে মিশু সিকদারও উপস্থিত ছিলেন আদালতে।
একটি জাতীয় দৈনিকে গত ২২ জুলাই ‘সাড়ে তিন মাস পর পেট থেকে বের হল গজ!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সেখানে বলা হয়, গত মার্চে সন্তান প্রসবের জন্য মাকসুদা বেগমকে (২৫) বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকে নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার করে মাকসুদার একটি মেয়ে হয়। কয়েক দিন ক্লিনিকে থাকার পর তারা বাড়ি ফেরেন। এক মাস পর মাকসুদা পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করায় আবারও ওই ক্লিনিকে যান। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করেন।
দুই মাস পর মাকসুদার খিঁচুনি দিয়ে জ্বর ওঠে, খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। পরে পটুয়াখালীর এক চিকিৎসকের পরামর্শে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ওই নারী। সেখানে ১২ জুলাই মাকসুদার পেট থেকে গজ বের করা হয়।
চিকিৎসকেরা সে সময় জানান, দীর্ঘদিন পেটের ভেতর গজ থাকায় খাদ্যনালিতে অনেকগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে মাকসুদার।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন গত ২৩ জুলাই আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদ উল্লা।
হাই কোর্ট সেদিন পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ও পটুয়াখালীর বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকের মালিককে তলব করে। ১ অগাস্ট আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় তাদের।
সেই সঙ্গে ওই ঘটনায় কেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ নয়জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
পরে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের কাছে ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদন চান হাই কোর্ট। সে প্রতিবেদনেই চিকিৎসক রাজন দাসের ভুয়া লাইসেন্সের বিষয়টি ধরা পড়ে।