বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারলে জনশক্তিই হবে দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
Published : 27 Jul 2017, 04:27 PM
বৃহস্পতিবার কারিগরী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “জনসংখ্যা বৃদ্ধি খুব একটা উদ্বেগজনক ব্যাপার না। অনেকে আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে।”
জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরে সঠিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যদি তাদেরকে শিক্ষাদীক্ষা দিতে পারি, তৈরি করতে পারি; তারাই হচ্ছে আমাদের মূল সম্পদ। জনশক্তিই আমাদের সব থেকে বড় সম্পদ।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ নমুনা জরিপ অনুযায়ী, এক লাখ ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দেশে ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। আর ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির শহর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, জনশক্তি আমাদের সম্পদ। এই শক্তিকে আমাদের আরো শিক্ষাদীক্ষা দিয়ে উন্নত করে গড়ে তুলতে হবে।”
দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন স্কিলস ফর দ্য ফিউচার ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ার্ক অ্যান্ড টিভিইটি (টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং) ফর গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস’ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কার ও বহুমাত্রিক কল্যাণে বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনমান প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবনঘনিষ্ট প্রযুক্তির ব্যবহার এখন বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রযুক্তির ব্যবহার জীবনমানে ‘বৈপ্লবিক পরিবর্তন’ এনেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও মনে করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, “উন্নত দেশসমুহে ক্রমেই কর্মক্ষম জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বাড়ছে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা। কোনো কোনো দেশ বয়স্ক মানুষের দেশ হিসেবে পৃথিবীতে চিহ্নিত হয়ে গেছে।”
তার বিপরীতে বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ মানুষের বয়স এখন ২৪ বছর বা তার নিচে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠীর এই সুবিধা বা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সদ্ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ওই সকল দেশ (বয়স্ক মানুষের দেশ) জনমিতির সুবিধাজনক অবস্থানের দেশসমূহের কর্মক্ষম জনশক্তির উপর ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।”
বর্তমানে বৈশ্বিক জনমিতির সর্বোচ্চ সুবিধাজনক অবস্থানে বাংলাদেশের থাকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সরকার এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগাতে তৎপর। ইতোমধ্যে মানবসম্পদ তৈরির বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। দক্ষ ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনই সরকারের মূল উদ্দেশ্য।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব কর্মব্যবস্থায় শতকরা ৯৩ থেকে ৯৪ ভাগ কর্মী থাকেন নিম্ন থেকে মধ্যম স্তরের। তাই পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় উন্নয়ন, উৎপাদন ও সমৃদ্ধির জন্য এই স্তরের জনশক্তি তৈরিতে মনোনিবেশ করতে হবে। আর সেজন্য টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিংকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীক্ষমতায় আসার আগে দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর হার ছিল মাত্র শতকরা ১.৮ ভাগ।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের নানা পরিকল্পনায় তা এখন শতকরা ১৪ ভাগে উন্নীত হয়েছে।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ২০২০ সালে মোট শিক্ষার্থীর শতকরা ২০ ভাগ, ২০৩০ সালে ৩০ ভাগ এবং ২০৪০ সালে ৫০ ভাগে উন্নীত করাই তার সরকারের লক্ষ্য বলে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।
কারিগরি শিক্ষার প্রসারে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগাম বন্যায় এবারে হাওর অঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে উজানের ঢলের পানিতে বাংলাদেশের বিস্তৃর্ণ অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড় ধসে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয়েছে। আমাদের সরকারের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এসব দুর্যোগ সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি এবং করে যাচ্ছি।”
প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনাদের দক্ষতা, কর্মনিষ্ঠা ও সততার উপর নির্ভর করছে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। কাজের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণে আপনারা কোনভাবেই আপস করবেন না; এটাই আমার অনুরোধ।”
ইন্সটিটিউট অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ও ম্যানিলাভিত্তিক আন্তঃদেশীয় রাষ্ট্রীয় সংস্থা কলম্বো প্ল্যান স্টাফ কলেজ (সিপিএসসি) যৌথভাবে তিন দিনের এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।