বাংলাদেশকে নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার দেওয়া বিবৃতি প্রচার-প্রকাশের আগে তা যাচাই করতে সম্পাদকদের পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
Published : 29 Sep 2016, 06:28 PM
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গি তৎপরতা নিরসনে করণীয়’ নিয়ে সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই পরামর্শ দেন তিনি।
রিয়াজুল হক বলেন, “আসলে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আপনার বাসায় বার্তাটা যাওয়ার আগে চলে যায় জেনেভাতে, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে.. কারা কোন সোর্সে এই তথ্য পাচ্ছে বা দিচ্ছে সে বিষয়ে কথা বলে আমরা বিভিন্ন সংস্থাকে তথ্যগুলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে যাচাইয়ের কথা ইতোমধ্যে বলেছি।
“আমরা চেষ্টা করছি, তারা কোনো একটা বার্তা দিলে সেটা নিজেরা যাচাই-বাছাই করার। আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকল, তারা কোনো বার্তা দিলে আপনারা আমাদের সঙ্গে ভেরিফাই করে নিলেন। তারপর আপনারা যেটা লিখবেন, সেটা আপনাদের মতো লিখবেনই।”
মতবিনিময় সভায় প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুমের বক্তব্যের সূত্র ধরে কমিশন চেয়ারম্যানের এ বক্তব্য আসে।
আন্তর্জাতিক সংস্থার দেওয়া বিবৃতিগুলোর বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, “তারা যে বিবৃতি দেয় সেগুলো কোনো কোনোটি বাদ দেওয়ার থাকলে কমিশন বাদ দেবে। তবে কিন্তু তারা যদি এমন কোনো বিবৃতি দেয় যেগুলো আসলে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে কমিশন উদ্যোগ নিবে।
“আমরা চাইবো, আন্তর্জাতিক সংস্থার আগেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো নিজেরাই তুলে ধরে সেগুলো প্রতিকারের ব্যবস্থা নিবে।”
সভায় সম্পাদকরা মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করতে আইনের অধীনে অধিকারের প্রয়োগ, বিগত কমিশনের পদক্ষেপ এগিয়ে নেওয়া এবং দুর্বলের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সরকার গঠন করে; কিন্তু গঠনের পর সেটা আর সরকারের থাকে না, জনগণের হয়ে যায়। সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে।
“বিগত কমিশন থেকে আমরা দেখেছি, তাদের কথা বলার অধিকার আছে; কিন্তু কথাগুলো প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে আইনগত অধিকার আছে কি না, সেটা আমরা জানি না।”
“আমাদের নির্বাচন কমিশনেরও আইনগত অনেক ক্ষমতা থাকলেও সেটা প্রয়োগের সাহসটা তাদের নাই। নতুন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে শিরদাঁড়া কত শক্ত সেটা আমরা দেখতে চাই। শুধু কথার ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে বেড়ালেই কাজ শেষ হয়ে যাবে না।”
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, কমিশনের আইনে তার সব ধরনের স্বাধীনতা দেওয়া আছে। আর্থিক সংস্থানের প্রক্রিয়াও বলা আছে। এখন প্রতিষ্ঠান হিসাবে এর দায়িত্ব হচ্ছে তারা নিজের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।
তিনি বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্তের বিষয় কমিশনের আইনে আছে। আমরা চাইব, কমিশন সে তদন্ত প্রতিবেদনগুলো দেবেন এবং আমরা জনগণের কাছে সেগুলো তুলে ধরতে পারব।”
বাসস চেয়ারম্যান রাহাত খান বলেন, “বিগত কমিশন হয়ত অত কিছু করতে পারেননি, কিন্তু কথা তো বলেছেন। মানুষের মনে সে কথাগুলো আলোড়িত করেছিল। মানুষ ও গণমাধ্যমে মধ্যে এই বিশ্বাসটা হয়েছে, কমিশন কথা বলছে। নতুন কমিশনের দায়িত্ব সেগুলোকে কাজে বাস্তবায়ন করা।”
কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার মতো সরকারের অনেক সংস্থা আছে। আমরা চাই, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দুর্বল ও সংখ্যালঘুদের পাশে থাকবে। দুর্বলের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে সবলের উপর দুর্বলবান্ধব এই কমিশন কতটা কঠোর হতে পারে সেটার ওপর নির্ভর করবে এর সাফল্য।”
বক্তাদের বক্তব্যের সূত্র ধরে কমিশন চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বলেন, “জঙ্গিদের রাষ্ট্রীয় দমনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বাহিনী চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা উগ্রবাদকে উগ্রবাদ দিয়ে মোকাবেলা করতে চাচ্ছি না। অবুঝ তরুণ-যুবক ভুল পথে পরিচালিত হয়ে রাতারাতি বেহেস্তে যাওয়ার লোভে পড়ে সে খারাপ পথে চলে যাচ্ছে, নিজে ও পরিবারের জীবন বিপন্ন করে চলেছে, এই জিনিসগুলো আমরা তাদেরকে বোঝাতে চাই।”
কমিশনের কাজ গতিশীল করার জন্য প্রত্যেক সদস্যকে প্রধান করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলে, “আমরা সুশীল সমাজ, মানবাধিকার নিয়ে যারা করেন, তাদের কমিটিতে নিয়েছি, যাতে আমরা সবাই মিলে কাজ করতে পারি। আমি হয়ত ব্যক্তিগতভাবে দুর্বল হতে পারি, কিন্তু সিভিল সোসাইটির লোকেরা তো দুর্বল নয়, তার সাহসিকতার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।”
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, মানবাধিকার কমিশনের সদস্য আখতার হোসেন বক্তব্য দেন।