সুন্দরবনের কাছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচির পর আগামী ২৬ নভেম্বর ঢাকায় ‘মহাসমাবেশের’ কর্মসূচি দিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
Published : 20 Aug 2016, 07:45 PM
ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাবে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন হুমকির মুখে পড়বে দাবি করে এই নাগরিক সংগঠনটি এর আগে রামপাল অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছিল।
পরিবেশগত ক্ষতি ন্যূনতম মাত্রায় রাখার সব বন্দোবস্ত রেখেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও তাতে আশ্বস্ত না হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি।
তার ধারাবাহ্তিায় শনিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়, যাতে বামপন্থি বিভিন্নর রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
বিকালে কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ দাবি পূরণে সরকারকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ‘চল চল ঢাকা চল’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সুন্দরবনের ক্ষতি হয় এমন সব চুক্তি বাতিলসহ সাতটি দাবিতে ২৬ নভেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করবে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি।
এই কর্মসূচির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, “২৩ নভেম্বরের মধ্যে সুন্দরবন বিনাশী প্রকল্প বাতিল না করলে ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হবে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি, ২৬ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে।
“কারণ ঢাকা হচ্ছে, এই সর্বনাশা প্রকল্পের কেন্দ্র এবং এই কেন্দ্র যারা পরিচালনা করছে তাদের ঘাঁটি। সুতরাং তাদের উদ্দেশ্য করে সারা দেশের মানুষ ঢাকার উদ্দেশ্যে আসবেন।”
তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব তিন মাসের কর্মসূচিও এদিন ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে, আগামী ২৬ অগাস্ট ফুলবাড়ি দিবসে দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ-মিছিল।
সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে বিভাগীয় সমাবেশ/কনভেনশন ও জেলা সমাবেশের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ‘সওয়াল-জবাব’ আয়োজন এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পদযাত্রার ঘোষণা দিয়েছে কমিটি।
এই সময় আন্দোলনরত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন স্থানে তাদের নিজ নিজ কর্মসূচি সমান্তরালভাবে অব্যাহত রাখবে বলে জানানো হয়েছে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, “আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি দিয়েছি। সেই চিঠির সন্তোষজনক জবাব পাইনি। উপরন্তু আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে।”
এই প্রকল্প বাতিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকেও খোলা চিঠি দেওয়া হবে জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, “ যেহেতু এই প্রকল্পের সাথে ভারতের সরকার যুক্ত। সেই জন্য ভারতের বন্ধুরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে সাথে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দেওয়ার হবে।”
সেই খোলা চিঠি দেওয়ার জন্য ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাসের সামনে সমাবেশের পরিকল্পনাও রয়েছে। এর দিনক্ষণ পরে জানাবেন বলে আনু মুহাম্মদ জানান।
প্রকল্প বাতিল না করলে দুই দেশের জনগণ আন্দোলন চালিয়ে সরকারকে বাধ্য করবে, বলেন তিনি।
এই প্রকল্প নিয়ে সরকারের ‘মিথ্যাচার’ চলছে অভিযোগ করে তিনি তার বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারিও আনু মুহাম্মদ।
রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি জনসচেনতা তৈরিতে সারাদেশে প্রতিবাদী গান, নাটক ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী; সুন্দরবন সংলগ্ন জেলা, থানা, ইউনিয়ন ও গ্রামে জনসংযোগ, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও সমাবেশের কর্মসূচিও দিয়েছে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি।
দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে বক্তব্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের এই উদ্যোগ থেকে সরে না এলে রাজনীতির গতি পাল্টে যেতে পারে বলেও প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করেন সিপিবি ও বাসদের নেতারা।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “যে আন্দোলনের জাগরণ সারা দেশব্যাপী আমরা সূচনা করেছি, সেটা স্তব্ধ হবে না। সেই আগুনে রাজনীতির পরিণতি কী হবে সেটা সরকারকে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।
“রাজনীতিতে পরিবর্তন এনে হলেও আমরা সুন্দরবনকে রক্ষা করার সংগ্রাম অব্যাহত রাখবো। প্রধানমন্ত্রী আপনি এটা জেনে রাখবেন।”
বাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “অতীতের আন্দোলনের কথা স্মরণ করে এই প্রকল্প থেকে সরে আসেন। তা না হলে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
“এরপর বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক অবস্থার গতি পরিবর্তনও ঘটে যেতে পারে। সে বিষয়টা মাথায় রাখবেন।”
তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর উপস্থিতিতে সকালে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে বিকাল পর্যন্ত প্রতিবাদী গান, নাটিকা, মুক্ত ক্যানভাসে ছবি আঁকা চলে।