রাজধানীর নীলক্ষেতে বাকুশাহ হকার্স মার্কেটের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করতে পুলিশের সহযোগিতায় দোকান ভাঙার কাজ শুরু করেছে বাকুশাহ হকার্স মার্কেট সমবায় সমিতি।
Published : 02 May 2016, 02:45 PM
সোমবার সকাল ১০টা থেকে দোকান ভাঙার কাজ শুরু হয়। শুরুতে মার্কেটের কিছু ব্যবসায়ী-ভাড়াটিয়া প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়।
নীলক্ষেত ঢাকায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবই ও বিভিন্ন সহায়ক বইয়ের অন্যতম বড় বাজার হিসেবে পরিচিত। বই ছাড়াও ফটোকপি, কম্পোজ, বাঁধাইসহ শিক্ষা উপকরণের বহু দোকান ও রেস্তোরাঁ রয়েছে এই মার্কেটে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার রুহুল আমিন সাগর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মার্কেট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বর্তমান দোকানগুলো ভেঙে বহুতল ভবন করা হবে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দোকান ভেঙে ফেলার কাজ চলছে।”
বাকুশাহ হকার্স মার্কেট সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল আউয়াল জানান,বাকুশাহ মার্কেটে মোট দোকান রয়েছে ১ হাজার ২০০টি, সমিতিতে সদস্য আছেন ২ হাজার ২০০ জন। অধিকাংশ দোকানই ভাড়া দেওয়া।
তিনি বলেন, “চার বছর আগে সমিতির সঙ্গে এ জি গ্রিন প্রপার্টি লিমিটেড নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির চুক্তি হয়। ওই ডেভেলপার কোম্পানি ইতোমধ্যে দোকান মালিকদের সাইনিং মানি দিয়েছে এবং সমিতির সব সদস্য সে টাকা পেয়েছেন।”
আউয়াল দাবি করেন, গত ডিসেম্বরে ডেভেলপার কোম্পানিকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীদের মালপত্র সরিয়ে নিতে অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে তাদের অনুরোধে ওই সময় কয়েক দফা বাড়ানো হয়।
“গত সপ্তাহে চিঠির মাধ্যমে আমরা সমিতির সব সদস্য ও ভাড়াটে ব্যবসায়ীদের অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছিলাম। আজ সকাল থেকে মালিক-ভাড়াটিয়ারা সরে যেতে শুরু করেছেন। তবে কোনো কোনো ভাড়াটিয়া এর বিরোধিতা করছেন।”
সমিতির সদস্য সচিব বাবুল আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য দুই ভাগে পুরো মার্কেট ভেঙে ফেলা হবে।
“প্রথম পর্বে পেছন থেকে ভেঙে সামনের দিকে এগোনো হবে। আজ এর প্রথম দিন।”
ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের বিষয়ে বাবুল বলেন, “অভিযান শুরুর সময় মার্কেটের সামনে ও পেছনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। এতে মার্কেটের সামনের অংশের ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তবে পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।”
অন্যদিকে সমবায় সমিতির এই দাবি নাকচ করে মার্কেটের ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফ্রেন্ড অ্যান্ড ফ্রেন্ডস বহুমুখী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, “বহুতল ভবন হচ্ছে- তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে সমবায় সমিতি আমাদের দোকান সরিয়ে ফেলতে বলছেন মুখে মুখে। তারা কাউকে কোনো চিঠি দেননি। কোনো পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে গতকাল বন্ধের দিনে তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।”
দুপুর পর্যন্ত বড় আকারে ভাঙার কাজ না চললেও কিছু দোকানের শাটার ভেঙে ফেলা হয়। ভাড়াটিয়া-মালিকদের বই ও অন্যান্য মালপত্র সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
কাগজ, কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা সামগ্রীর দোকানি বেলাল হোসেন এবং ফটো কপিয়ারের দোকানি কামরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৬/৭ বছর আগে ভাড়া নেওয়ার সময় তারা মালিককে এককালীন মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছিলেন। তার কী হবে, সে বিষয়ে তাদের কিছু বলা হচ্ছে না।
বেলাল বলেন, “মালিক তো আমাদের সরে যেতে বলেননি বা সমিতির পক্ষ থেকেও কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। মুখে মুখে শুধু সরে যাওয়ার কথা শুনেছি।”
ফ্রেন্ড অ্যান্ড ফ্রেন্ডস বহুমুখী ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য জসিম উদ্দিন গাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান,নতুন বহুতল ভবনে কীভাবে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে, তা জানতে গত বছর এপ্রিল মাসে সমবায় সমিতির কাছে জানতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু সমিতি তার জবাব না দিয়েই ভাঙার কাজ শুরু করেছে।