মাগুরায় যুবলীগের সংঘর্ষের মধ্যে গর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভূমিষ্ঠ শিশুটির মা ঢাকায় এখন সন্তানের পাশে।
Published : 30 Jul 2015, 11:31 PM
প্রায় ৬ ঘণ্টা ভ্রমণের পর বৃহস্পতিবার রাতে পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান নাজমা বেগম (৩০), সেখানে তার সন্তানটিকে বাঁচাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
শরীরে গুলির ক্ষত ও অস্ত্রোপচারের ধকল নিয়ে ভ্রমণক্লান্তির মধ্যেই নাজমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ভালো আছি।”
শিশুটিকে বাঁচাতে তার মায়ের পাশে থাকার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সেজন্যই অসুস্থতা নিয়েই ঢাকায় ছুটে এসেছেন এই নারী।
ঢামেক হাসপাতালে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল গফুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মায়েরও চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিশুকে মায়ের সঙ্গ ও বুকের দুধ দেওয়া।
“একজন মা ছাড়া নবজাতক শিশুর জন্য বড় চিকিৎসক আর কেউ না।”
এলাকায় আধিপত্য নিয়ে মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় গত ২৩ জুলাই যুবলীগকর্মী কামরুল ভূইয়ার সঙ্গে সংগঠনের কর্মী মহম্মদ আলী ও আজিবরের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়।
ওই সময় গুলিতে কামরুলের বড় ভাই বাচ্চু ভুইয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নাজমা, প্রতিবেশী মিরাজ হোসেন আহত এবং তার চাচা আব্দুল মোমিন নিহত হন।
ওই রাতেই মাগুরায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নাজমার গুলিবিদ্ধ শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়। দুদিন পর তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
নাজমা বলেন, “সেখানকার (মাগুরার) চিকিৎসকরা বলেছেন, আমার সন্তানের পেটে যদি গুলি না লাগত, তাহলে সেই গুলিতে আমার খাদ্যানালী ক্ষতিগ্রস্ত হত, এমনকি আমি মারাও যেতে পারতাম। তার জন্য আমি বেঁচে গেছি।”
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাতৃগর্ভে থাকা শিশুটির বুকের ডানদিন দিয়ে গুলি ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে গেছে।
হাসপাতালে নাজমার শয্যাপাশে থাকা স্বামী বাচ্চু ভূঁইয়া বলেন, “এখন আমাদের পালা শিশুটি বাঁচিয়ে তোলা।”
বুধবার শিশুটির অস্ত্রোপচার হয়। বর্তমানে সে নবজাতক ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছে।
শিশুটির জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক আশ্ররাফুল হক কাজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মায়ের গর্ভে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাওয়ার আগেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাকে ভূমিষ্ঠ করানো হয়েছে। ফলে শিশুটি কম ওজনের ও দুর্বল অবস্থায় জন্ম নিয়েছে।
শিশুটির নাম এখনও রাখা হয়নি। নামের প্রসঙ্গ তুলতেই নবজাতকের চাচা রেজওয়ান ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাতিজির নাম নিয়েই ভাবছি আমরা। সে গর্ভে থেকেই মাকে রক্ষা করেছে, তার নাম তো সেই রকমই রাখতে হবে।”
মাতৃগর্ভে শিশুটির গুলিবিদ্ধ হওয়ার এই ঘটনায় সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। সংঘর্ষে জড়িতদের ধরতে তৎপরতা চলছে বলে দাবি করলেও কাউকে এক সপ্তাহেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।