র্যাব বলছে- গ্রেপ্তাররা ‘ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং’ (বিডিএসকে) গ্রুপের সদস্য; মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত তারা।
Published : 29 Jan 2023, 05:43 PM
রাজধানীতে মাদক কারবারি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে আট তরুণকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব বলছে, একটি গ্রুপের অধীনে থেকে ‘ভাড়ায়’ অন্যের জমিদখল, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছিলেন তারা।
শনিবার রাতে সদরঘাট, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ ও ফরিদপুর থেকে তাদের গ্রেপ্তারের কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- শ্রীনাথ মণ্ডল হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয় (২২), রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন (২০), মো. রাসেল ওরফে কালো রাসেল (২৫), আলামিন ওরফে ডিশ আলামিন (২১), মো. লোমান ওরফে ঘাড়ত্যাড়া লোমান (২১), মো. আশিক ওরফে হিরো আশিক (১৯), জোবায়ের ইসলাম ওরপে চিকনা জোবায়ের (১৯) এবং মো. সুমন ওরফে বাইট্টা সুমন (২০)।
রোববার কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তাররা সবাই স্থানীয়ভাবে ‘ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং’ (বিডিএসকে) গ্রুপের সদস্য হিসেবে পরিচিত।
“২০-২৫ জনের গ্যাংয়ে দলনেতা হিটার হৃদয়, তার নেতৃত্বেই দুই-তিন বছর আগে এই গ্যাং গড়ে ওঠে। মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত তারা।”
সংবাদ সম্মেলনে মঈন বলেন, “এ গ্রুপের সদস্যরা আগে সবুজ বাংলা গ্রুপ, টপ টেন ও ভাই-বন্ধু গ্রুপে ছিলেন। হৃদয়ের নেতৃত্বে নতুন গ্রুপ হওয়ার পর এদের উৎপাত বেড়ে যায়। বিভিন্ন ব্যক্তির হয়ে ‘ভাড়াটে সন্ত্রাসী’ হিসেবেও তারা কাজ করতেন। মাদক সেবন ও কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।”
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে জানিয়ে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, “রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রীতিকর ভিডিও শেয়ারসহ নানা অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। মাদক, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মারামারিসহ একাধিক মামলা রয়েছে তাদের নামে।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ৭ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে আদাবর থানাধীন তিন রাস্তার মোড় এলাকায় একজনকে জখম করে তার কাছে থাকা মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ওই চক্রের সদস্যরা। ওই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে র্যাবে সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে ৮-১০ জন তরুণের একটি দলকে চিহ্নিত করার পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক বলেন, “হিটার হৃদয় তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। লেগুনার হেলপারি করতেন। বছর দুয়েক আগে তিনি বিডিএসকে গ্যাংয়ের লিডার বনে যান। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে, একাধিকবার কারাগারেও গেছেন।
“হিটার হৃদয়ের প্রধান সহযোগী রবিন নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা ছাড়েন। কাজ করতেন আদাবরের একটি রিকশা গ্যারেজে। তার বিরুদ্ধেও রাজধানীতে ছয়টি মামলা রয়েছে, কয়েকবার জেলও খেটেছেন। অন্যদিকে আলামিন ও লোমান আদাবর এলাকায় অটোরিকশা চালান। তাদের বিরুদ্ধেও আগের মামলা আছে।”
জোবায়ের মোহাম্মদপুর এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। হিরো আশিক তার সহকারী। সুমন অটোরিকশা চালান। এ তিনজন ছাড়া অন্য সবাই একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন। কুখ্যাতির কারণে স্থানীয়ভাবে তাদের নামের আগে ‘হিটার’, ‘ঘাড়ত্যাড়া’, ‘চিকনা’, ‘কালা’, ‘বাইট্টা’ ইত্যাদি বিশেষণ যুক্ত হয়েছে বলে র্যাবের ভাষ্য।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা অপরাধ করছে কিনা- এমন প্রশ্নে খন্দকার মঈন বলেন, “আমরা সরাসরি কোনো পৃষ্ঠপোষক পাইনি। তবে গ্রেপ্তার হৃদয় ও রবিন বলেছেন, বিভিন্ন সময় অর্থের বিনিময়েও তারা নানা অপরাধ করেছেন। হাউজিং, বালু বা মাটি উত্তোলন সংক্রান্ত বিরোধে তারা টাকার বিনিময়ে অংশ নিতেন। যারা তাদের দিয়ে কাজ করিয়েছে তাদেরকে নিয়েও র্যাব কাজ করছে।”
তবে মোহাম্মদপুরের স্থানীয় এক নেতা ও ব্যবসায়ী বলছেন, এলাকার রাজনীতির বিরোধে নেতারা এদের ব্যবহার করে আসছেন। বেড়িবাঁধসহ আশপাশের এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান এরা, সবাই বিভিন্ন কাজে যুক্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সর্বশেষ নির্বাচনের আগে প্রচারের গাড়ি থেকে পড়ে দুটি ছেলে মারা যায়। এর মধ্যে এলাকায় একাধিক মারামারি, কোপাকুপিও হয়েছে। স্থানীয় উঠতি নেতারা এদের হাতে রেখে নিজেদের দল ভারী করছেন।”
গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যমতে মোহাম্মদপুর থেকে বিদেশি পিস্তল, চাপাতি, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, চাকু, হাঁসুয়া, কাঁচি ও লোহার রড উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র্যাব।