Published : 05 Jul 2011, 01:20 PM
বাংলাদেশ ৩০ লাখ শহীদি বীরের উৎসর্গকৃত জীবনের বিনিময়ে অর্জিত একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। যে দেশকে নিয়ে গর্ব করে বহু কবি, সাহিত্যিক লিখেছেন কবিতা, গল্প, গান, উপন্যাসসহ বিভিন্ন রচনা। ইতিহাসে তাকালে আমরা দেখতে পায়, পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে এ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেশের প্রতি লক্ষ্য করলে সহজেই বোঝা যায় যে, অতীতের ঐতিহ্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি। দেশ চলেছে কোন পথে। একদিকে প্রতিহিংসার রাজনীতি অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের আকাশ ছোয়া বাজার সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে গত ৮ অক্টোবর দিন দুপুরে বিএনপি সমর্থিত নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূরকে মিছিলে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণ, ছিনতাই এবং খুনের ঘটনা তো রয়েছে । গত ২৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের অধিবেশনে মাননীয় স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য মতে, দেশে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ১ হাজার ৯৫১ টি খুন হয়েছে। এ ছাড়াও ১ হাজার ৫৮৬ টি ধর্ষণসহ সারা দেশে সাড়ে ১৭ হাজার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ছিনতাই, ধর্ষণ, টেন্ডারবাজি নিত্য দিনের ঘটনা।
কেন এসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে সে দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কতটা দৃষ্টিগোচর করেছে তা আমাদের জানা নেই। এভাবে দেশে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দেশের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিবে। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্কিত হবে। মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে চিন্তা-ভাবনায় পড়তে হবে। ইভটিজিং এর ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেওয়ার পরও অনেক স্থানে ইভটিজিং বন্ধ হয় নি। বিভিন্ন কায়দায় তরুণীদের অর্থাৎ মোবাইল ফোন, ফেইসবুক, টুইটার এবং ই-মেইলের মাধ্যমে ইভটিজিং করা হচ্ছে। যা আরো ভয়াবহ। প্রভা-রাজীবের নগ্ন ভিডিও চিত্র প্রচারের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিনোদপুর কলেজের এক প্রভাষক এবং বিবাহিত ছাত্রীর নগ্ন ভিডিও চিত্র তরুণদের মোবাইলে মোবাইলে প্রচার হয়েছে। দেশে সাইবার আইন থাকলেও এর তেমন প্রয়োগ নেই বললেই চলে। ফলে তরুণ-তরুণীদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে। বেশ কিছু দিন আগে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকেও সন্ত্রাসীরা খুন করে। সাংবাদিক নির্যাতন, রাজনৈতিক কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছে এমন অভিযোগ বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা জোর গলায় বলছে। মিডিয়াও সে সব কথা গুরুত্বের সাথে প্রচার করছে। কুমিল্লাতে বেশ কিছুদিন আগে মুখোশ পরিহিত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া করার ঘটনা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে কিভাবে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরতে পারে। তাহলে কি এ স্বাধীন দেশ ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছে। পাবনাতে সরকারি কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে,দ্বন্দ দেখা দিয়েছিল তা দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতো যদি দ্রুত সমাধান না হতো।
সমসাময়িক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে মনে হয়, দেশ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া, ছাত্র এবং শ্রমিকের প্রাণ অকালে ঝরছে। বেশ কয়েকমাস আগে সিরাজগঞ্জ সায়েদাবাদ রেলস্টেশনে ট্রেনে কাটা পড়ে কয়েকটি তাজা প্রাণ হারিয়ে গেল। বিএনপির জনসভায় যোগ দিতে গিয়ে তাদেরকে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য ছুঁড়েছেন ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দল। যে যাই মন্তব্য করুক না কেন যে কয়েকটি তাজা প্রাণ অকালে চলে গেছে তাদেরকে কখনও ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। অন্যদিকে ট্রেনে আগুন লাগিয়ে সরকারি সম্পদকে নষ্ট করা হয়েছে। এসব সভ্য সমাজের কাম্য নয়। সামান্য ঘটনা নিয়ে জ্বালাও পোড়াও, লুটপাট এবং ভাংচুরের ঘটনা যে দেশে ঘটে সে দেশ কিভাবে অর্থনৈতিক দিক থেকে দ্রুত অগ্রসর হতে পারে। এ দেশের জাগ্রত মানুষের বিবেক আজ দুর্নীতিবাজ, বাজিকর, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে জিম্মি। কিছু করার নেই। প্রতিবাদ করতে গেলে জীবন হারাতে হবে। জীবনের মূল্যকে এখনও মানুষ দামী হিসেবেই বিবেচনা করে।
আমাদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে পশুর মত হয়ে যাচ্ছি। আমাদের বিবেক এত নিচে নেমে গেছে। ছাত্রলীগ কর্মীদের ব্যাপারে জনগণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। টেন্ডারবাজি, অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে মেধাবীর প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে। তারপরেও যেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগকে থামানো যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠন সমূহ হরতালে ভাংচুর করে যাচ্ছে।
৬ জুলাই থেকে বিএনপি, জামায়াত ইসলামী এবং ইসলামি ঐক্যজোটের ডাকে হরতালের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। একদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, অন্যদিকে বিভিন্ন মামলার রায়ে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের নাম থাকায় রাজনীতি যেন ফুঁসে ওঠেছে। কোন ভাবেই কেউ সংযত হচ্ছে না । যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও চলছে। যদিও জামায়াত এখন তেমন কোন কর্মসূচী দেননি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে। তবুও যেন দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এত হরতাল দিলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার বারোটা বাজবে। পরিশেষে, সবার নিকট আকুল আবেদন, আপনারা দেশের সম্পদ রক্ষা এবং দেশের জনগণের মাঝে শান্তির জন্য এগিয়ে আসুন। এক যোগে কাজ করুন। প্রতিহিংসার রাজনীতি ভুলে যান। যদি প্রতিহিংসার রাজনীতি চালু থাকে তবে জনগণ ক্ষমা করবে না কোন রাজনীতি দলকে। এবং একসময় ঠিকই জনগণ রুখে দাঁড়াবে দেশ রক্ষার্থে।
***