একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই সবার জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার আশ্বাস এসেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকে।
Published : 29 Dec 2018, 04:56 PM
ভোটের পরিবেশ নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনে ‘কঠোর ব্যবস্থা নিতে’ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ভোটের আগের দিন শনিবার বিকালে ঢাকার নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, “নির্বাচনে সকলের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের সদস্যদের নির্দেশ দিচ্ছি। সহিংস ও নাশকতামূলক অবস্থার সৃষ্টি হলে তা কঠোর হাতে দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছি।”
চার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদও উপস্থিত ছিলেন এ সময়।
সারা দেশে ২৯৯ আসনে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। দেশের সাড়ে ১০ কোটি ভোটার যাদের পক্ষে রায় দেবে, তারাই গঠন করবে বাংলাদেশের পরবর্তী সরকার।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপের পর ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন থেকে দলীয় সরকারের অধীনে ভোট হচ্ছে। কিন্তু সংসদ বহাল রেখে ভোটে ‘সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি’ করা সম্ভব কি না- সেই প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো তখন থেকেই বিভক্ত।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বরাবরই সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার আদলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবি জানিয়ে আসছে।
সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে ওই নির্বাচনে অংশ নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১২টি দল। তাতে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে।
আওয়ামী লীগ ও শরিকরা সংসদ ভেঙে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি এবারও মেনে নেয়নি। তবে বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনেতিক দলকেই এবার ভোটে পাচ্ছে বাংলাদেশ।
ভোটের সার্বিক প্রস্তুতির পাশাপাশি ভোটের কাজে নিয়োজিত সবার দায়িত্ব তুলে ধরে সিইসি সংবাদ সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, দল, সমর্থক ও ভোটারদের সহনশীল মনোভাব দেখাতে অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, সে পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিশনের কঠোর অবস্থান তুলে ধরে নূরুল হুদা বলেন, ‘কোনো মহল’ অবৈধভাবে ভোটকেন্দ্রে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করবে।
“কোনো বাহিনীর নির্লিপ্ততার কারণে বা নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ ব্যাহত হলে সেই কেন্দ্রের দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও প্রচারের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নিজের অসন্তোষের কথা জানান কে এম নূরুল হুদা।
“দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি, নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে। রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে, সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হয়েছে। এগুলো আমাদের কাম্য ছিল না।”
সহিংসতার কারণে যেখানে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেখানে নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সিইসি।
এজেন্টদের হয়রানি না করার নির্দেশ
নির্বাচনের নিয়ম কানুন তুলে ধরে সিইসি বলেন, ভোট শেষ হলে এজেন্ট, সাংবাদিক, পর্যব্ক্ষেকদের সামনে কেন্দ্রের ব্যালট গণনার কাজ শুরু করবেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। কোনো অবস্থায় নির্বাচনী কেন্দ্রের বাইরে ব্যালট গণনা করা যাবে না।
“প্রার্থীর এজেন্টকে নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ করা হচ্ছে, এটা কাম্য নয়। কোনো এজেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কোনো অভিযোগ না থাকলে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করবে না। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে তাদেরকে পুরো নিরাপত্তা দিতে হবে।”
ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই কেন্দ্র ত্যাগ না করার পরামর্শ দিয়ে সিইসি জানান, “কেউ যদি অবৈধভাবে এজেন্টকে কক্ষ ত্যাগ করতে বলে, তখন ম্যাজিস্ট্রেট বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা নিতে হবে।”
সাংবাদিকদের কাজে যেন বিঘ্ন না ঘটে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেন নূরুল হুদা। দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তিনি নির্দেশ দেন।
“আপনাদের কারও কারণে নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, কোন প্রার্থী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং তারা যেন ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।”
ভোটারদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, “কোনো রকম প্রলোভন, প্ররোচনা, প্রভাব বা ভয়ভীতির কাছে নতি স্বীকার করবেন না। স্বাধীনভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।”
সবার চেষ্টায় সফলভাবে নির্বাচন শেষ করা সম্ভব হতে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।