কারও মুখের দিকে না তাকিয়ে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 24 Nov 2014, 02:18 PM
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ভিডিও কনফারেন্সে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান ও পুলিশ কমিশনার মো. কামরুল আহসানের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন “কিছুদিন আগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বোধহয় এক সমস্যা দেখা দিয়েছে, এ সম্পর্কে পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে জানতে চাই।”
“এখানে একটা নির্দেশ আমি দিতে চাই, যারাই এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস করবে, যে দলের হোক, কে কোন দলের সেটা দেখার কথা না, যারা এ ধরণের কর্মকাণ্ড করবে সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হবে।”
এরপর সিলেটের পুলিশ কমিশনার প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, “গত ২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। মারামারিতে একজন ছেলে নিহত হয়। ঘটনার সময় নিয়ন্ত্রণ করেছি। তা না হলে হয়তো আরো ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত।”
তিনি জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে; বিশেষ অভিযানে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
“এই অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারব।”
গত বৃহস্পতিবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের গুলিতে সুমন চন্দ্র দাস (২২) নামে এক বহিরাগত ছাত্র নিহত হন, যিনি নিজেও একজন ছাত্রলীগ কর্মী।
ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে বলে কর্তৃপক্ষ।
পরদিন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান দাবি করেন, সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে, তাতে ছাত্রলীগ জড়িত নয়।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বলেন, “আমি জানি যে যারাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণ্ডগোল করুক, একটা পর্যায়ে দেখা গেছে সেখানে ছাত্রের চেয়ে অছাত্র বেশি, কিছু বহিরাগত, তারাও এর সাথে জড়িত থাকে।”
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনারকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন- “এ ব্যাপারে কোনো দিকে না তাকিয়ে, কারো মুখের দিকে না তাকিয়ে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নিবেন এটাই আমরা চাই।”
সিলেটের সঙ্গে আরেকদিন ভিডিও কনফারেন্স করবেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটি চলমান থাকবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব।”
প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ভাল থাকুক, সুখে থাকুক, উন্নত জীবন পাক- এটাই আমরা চাই।”
সিলেট ছাড়াও রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনার এবং মৌলভীবাজার ও পাবনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গেও ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘তৈরি থাকবেন, যে কোনো সময় বসব’
মৌলভীবাজার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ শুরু করলাম, এরপর অন্যান্য বিষয় নিয়ে সবাই সব সময় তৈরি থাকবেন। আপনারা কে কী কাজ করছেন, সমস্ত ডাটা নিয়ে রেডি থাকবেন। যে কোনো সময় বসব, কথা বলব এবং জিজ্ঞাস করব- যার যার স্ব স্ব এলাকায় কী কী কাজ হচ্ছে।”
প্রতিমাসে ২ বার ভিডিও কনফারেন্স
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, এখন থেকে মাসে দুই দিন জেলা উন্নয়ন কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী।
সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বসবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্প থেকে এ বিষয়ে সহায়তা দেওয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “প্রত্যেক জেলায় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি রয়েছে। তাতে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন। এটা একটা ভাল ফোরাম, এখানে জেলার উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
“সেখানে প্রধানমন্ত্রী যদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যাগুলো তিনি জেনে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী চাইলে তাৎক্ষণিক নির্দেশনাও দিতে পারেন।”