হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কারের পর এক শিক্ষককে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে।
Published : 07 Nov 2014, 04:01 PM
এ অভিযোগে অধ্যাপক ডা. ফজলুল হক জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শুক্রবার দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
এদিকে, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগের মুখোমুখি অবস্থানের প্রেক্ষিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে কঠোর অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছে প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম।
হাবিপ্রবির ভেটিরিনারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফজলুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) হাবিপ্রবির ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে সহযোগিতার দায়ে শৃংখলা কমিটির সভার সিদ্ধান্তে ছাত্রলীগ হাবিপ্রবি শাখার সাধারণ সম্পাদক অরুণ কান্তি রায় ও জিয়া হল শাখার সভাপতি জাহিদ হাসানকে বহিষ্কার করা হয়।
অধ্যাপক ফজলুল হক নিজে ওই শৃংখলা কমিটির একজন সদস্য বলে জানান।
তিনি জিডিতে উল্লেখ করেন, ওইদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে বের হওয়ার সময় অরুণ কান্তি রায় তাকে বের হতে বাধা দেন এবং ইফতেখার ইসলাম রিয়েল তাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।
তারা তাকেসহ (অধ্যাপক ফজলুল হক) আরো আট শিক্ষককে রেজিস্ট্রারের কক্ষে রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আটকে রাখেন। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।
কোতোয়ালি থানার ওসি আলতাফ হোসেন জিডি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে ইফতেখার ইসলাম রিয়েল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “আমাদের ভিসি (উপাচার্য) বিরোধী আন্দোলনকে নস্যাত করতে শিক্ষকরা মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন। কোনো শিক্ষককে হুমকি দেয়ার অভিযোগ সত্য নয়।”
শিক্ষক ফোরামের সংবাদ সম্মেলনে
শুক্রবার দিনাজপুর প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ এক সম্মেলনে প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে যেকোনো ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. বলরাম রায় লিখিত বক্তব্যে বলেন, হাবিপ্রবির সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা ছাত্রলীগের নামধারী নেতাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে ফোরাম যেকোনো ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত রয়েছে।
অধ্যাপক বলরাম বলেন, ৪ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সঙ্গে জড়িত পরীক্ষার্থী আবুল হোসেনকে ডিভাইসযুক্ত ক্যালকুলেটরসহ আটকের পর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অরুণ কান্তি রায় ও জিয়া হলের সভাপতি জাহিদ হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
তিনি বলেন, জালিয়াতির সঙ্গে ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে অরুণ ও জাহিদ জড়িত। তাই ছাত্রলীগের ব্যানার ব্যবহার করে এই অপকর্মের মূল ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা নিন্দনীয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াল ও সাধারণ সম্পাদক অরুণ নানাভাবে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ সহনশীল আচরণের মাধ্যমে সেসব অভিযোগ আমলে নেয়নি। আর তার সুযোগ নিয়ে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে রিয়াল ও অরুণ ক্যাম্পাসে হুমকি-ধামকি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছেন।
এদের বিরুদ্ধে আর কোনো নমনীয়তা প্রদর্শন করা হবে না বলে জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক ফোরামের সহ-সভাপতি ড. আনিস খান, ড. ফাহিমা খানম, যুগ্ম সম্পাদক ড. শাহাদাত হোসেন খান, ডা. এস এম হারুন উর রশিদ, সদস্য ডা. ফজলুল হক, ড. উত্তম কুমার মজুমদার, ড. বিকাশ চন্দ্র রায়, ড. নাজিম উদ্দিন, ড. শ্রীপতি শিকদার, সহযোগী অধ্যাপক মমিনুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর সাদেকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে জড়িত সন্দেহে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমার রায় ও সদস্য এসএম জাহিদ হাসানকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
অরুণ কুমার রায় পিএইচডির ছাত্র ও এসএম জাহিদ হাসান বিএস লেভেল-৪ সেমিস্টার-১ এর ছাত্র।
কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওইদিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ও প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়।
ওই সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি ইফতেখার ইসলাম রিয়েল এই ঘোষণা দেন। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরুন কান্তি রায়।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রলীগ মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়।