গাম্বিয়ার করা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমারের আপত্তির বিষয়ে রায় দিচ্ছে আইসিজে
Published : 22 Jul 2022, 06:14 PM
রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা বিচারের এখতিয়ার নিয়ে মিয়ানমারের আপত্তির বিষয়ে রায় দিতে চলেছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে), যার মধ্য দিয়ে এ মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির পথ খুলতে পারে।
২০২১ সালে সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতায় বসা সামরিক জান্তার দাবি, গণহত্যার অভিযোগ তুলে জাতিসংঘের এ আদালতে মামলা করার এখতিয়ার গাম্বিয়ার নেই।
তাদের সেই আপত্তি নিয়ে আইসিজেতে গত ২১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি চারটি গণশুনানি হয়। শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে চলেছে নেদারল্যান্ডসের হেগে শহরের এ আদালত।
রোহিঙ্গা গণহত্যা: ফের শুনানিতে বসেছে আইসিজে
মিয়ানমারে শান্তির অন্তরায় সেনাবাহিনী: ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন
রাখাইন অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল গণহত্যা: জাতিসংঘের প্রতিবেদন
রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যা-নির্যাতন নিয়ে ২০১৯ সালে মামলাটির প্রাথমিক শুনানিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন দেশটির নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি, তিনি এখন সেই সামরিক জান্তার হাতে বন্দি।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে বর্তমান জান্তা। এই সরকার জাতিসংঘের স্বীকৃতি না পেলেও তাদের ঠিক করে দেওয়া আট সদস্যের দল আইসিজেতে লড়ছে। এ দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিয়ানমারের অ্যাটর্নি জেনারেল থিডাও।
পাঁচ বছর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে যে বর্বরতা চালানো হয়, তার মধ্য দিয়ে দেশটি ১৯৪৮ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে গাম্বিয়ার করা মামলায়।
গাম্বিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বাংলাদেশের একটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করার পর বলেন, জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন সমুন্নত রাখা সকল দেশের দায়িত্ব। মিয়ানমারে চালানো গণহত্যা রোধ ও রক্তপাত বন্ধে এই মামলায় ৫৭ জাতি সংগঠন ওআইসির সমর্থন রয়েছে।
জাতিসংঘের পৃথক যাচাই কমিটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অভিযানে ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। মিয়ানমারের এই নির্যাতন ছিল ‘গণহত্যামূলক কাজ’।
মিয়ানামারের আপত্তি যদি বিচারকরা প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের পথ খুলবে, তবে তাতে কয়েক বছর সময় লাগতে পরে।। পক্ষান্তরে মিয়ানমারের পক্ষে রায় দিলে আইসিজে মামলা এখানেই শেষ হবে।
যদিও আদালতের সিদ্ধান্তগুলো বাধ্যতামূলক এবং দেশগুলো তা মেনে চললেও তাদের জোর করার কোনো উপায় নেই।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুনানির ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে জরুরি ভিত্তিতে চার দফা অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছিল আইসিজে।
রাখাইনে ‘গণহত্যা’ হয়েছে, গবেষণায় তথ্য
মিয়ানমারে গণহত্যার অভিপ্রায়েই রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ: জাতিসংঘ
রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে চার দফা নির্দেশ আইসিজের
সেখানে বলা হয়েছিল, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা কোনো পক্ষ এমন কিছু করতে পারবে না, যা গণহত্যা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। গণহত্যার অভিযোগের সমস্ত আলামত তাদের সংরক্ষণ করতে হবে।
কিন্তু তার পরের দুই বছরে দেশটির পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফিরিয়ে নেয়নি। বরং রাখাইনসহ সেদেশের বিভিন্ন এলাকায় জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের নতুন নতুন খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা এখনও নাগরিকত্ব ও চলাচলের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত। দেশটির সরকারের নিপীড়নে বাস্তুচ্যুত কয়েক হাজার মানুষ এক দশক ধরে নোংরা ক্যাম্পে জীবনযাপন করছে।
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারে। এ আদালত কোনো ব্যক্তিবিশেষকে সাজা দিতে পারে না, যেমনটি পারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। আইসিসি আলাদাভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনা তদন্ত করছে।
আইসিজেতে মামলা হলে আদালতের সিদ্ধান্ত মানার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে সদস্য দেশগুলোর ওপর। আর সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। তবে সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করার কোনো ক্ষমতা নেই এ আদালতের। সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করারও বহু উদাহরণ রয়েছে।