বিশেষ প্রতিরোধ বাহিনী ও ৪৪৪ ব্রিগেড ত্রিপোলির সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি বাহিনী, তাদের লড়াই রাজধানীর প্রায় সব এলাকাকে কাঁপিয়ে তুলেছিল।
Published : 16 Aug 2023, 03:22 PM
লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে দুই শক্তিশালী সশস্ত্র উপদল চলতি বছরের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিল, কিন্তু এক পক্ষ একজন কমান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার পর গোলাগুলি বন্ধ হয়।
এই কমান্ডারের আটককে কেন্দ্র করেই সোমবার রাতে এ লড়াই শুরু হয়েছিল।
ত্রিপোলির স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মঙ্গলবার দিনের অধিকাংশ সময়জুড়ে চলা এ সহিংসতায় ২৭ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। তবে হতাহতদের মধ্যে যোদ্ধা এবং বেসামরিকরাও রয়েছেন কিনা তা পরিষ্কার করেনি তারা।
বিশেষ প্রতিরোধ বাহিনী ও ৪৪৪ ব্রিগেড ত্রিপোলির সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি সামরিক বাহিনী, তাদের লড়াই রাজধানীর প্রায় সব এলাকাকে কাঁপিয়ে তুলেছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মঙ্গলবার দিনের অধিকাংশ সময়ই শহরের কয়েকটি অংশের ওপর ঘন ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল। সঙ্গে শোনা যাচ্ছিল ভারী অস্ত্র থেকে ছোড়া একটানা গুলির আওয়াজ। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে লড়াই ছড়িয়ে পড়েছিল।
ত্রিপোলির মিতিগা বিমানন্দর এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষ প্রতিরোধ বাহিনী ৪৪৪ বিগ্রেডের কমান্ডার মাহমুদ হামজাকে আটক করলে সোমবার রাত থেকে দু’পক্ষের মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। ভ্রমণের উদ্দেশে হামজা মিতিগা বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার পর প্রতিপক্ষ তাকে আটক করেছিল।
বিশেষ প্রতিরোধ বাহিনী কয়েক বছর ধরেই ত্রিপোলির প্রধান সশস্ত্র উপদল হিসেবে সক্রিয়া আছে। মিতিগা বিমানবন্দর ও পূর্বাঞ্চলমুখি প্রধান মহাসড়কের একটি অংশসহ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকাগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
অপরদিকে ত্রিপোলির বিশাল এলাকাসহ রাজধানীর দক্ষিণের এলাকাগুলো ৪৪৪ ব্রিগেডের নিয়ন্ত্রণে আছে।
হামজা বিশেষ প্রতিরোধ বাহিনীর সাবেক একজন কর্মকর্তা। বিভিন্ন সশস্ত্র পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে একসময় প্রধান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।
রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক জানিয়েছেন, ত্রিপোলির আরেকটি উল্লেখযোগ্য সশস্ত্র উপদল স্টেবিলাইজেশন সাপোর্ট অ্যাপারেটাস তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর রাস্তায় সামরিক যান ও যোদ্ধা প্রস্তুত করে রেখেছিল, কিন্তু এ সংঘাতে যোগ দেয়নি তারা।
ত্রিপোলির মুরুব্বিরা যারা লড়াইরত দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতায় মধ্যস্থতা করেছেন তারা টেলিভিশনে দেওয়া ঘোষণায় জানিয়েছেন, বিশেষ প্রতিরোধ বাহিনী হামজাকে স্টেবিলাইজেশন সাপোর্ট অ্যাপারেটাসের হাতে তুলে দেবে এবং যোদ্ধারা তাদের ঘাঁটিতে ফিরে যাবে।
এ ঘোষণার পর দু’পক্ষের মধ্যে চলতে থাকা রক্তক্ষয়ী লড়াই বন্ধ হয়, যার মধ্যে কিছু মিতিগা বিমানবন্দরের আশেপাশেও চলছিল।
লড়াইয়ের কারণে মিতিগাগামী ফ্লাইটগুলোকে ত্রিপোলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার পূর্ব দিকের শহর মিসরাতারার বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
গত বছর সংক্ষিপ্ত লড়াইগুলো চলাকালে বিশেষ প্রতিরোধ বাহিনী ও ৪৪৪ ব্রিগেড, উভয়পক্ষই লিবিয়ার জাতীয় ঐক্যমতের সরকারকে (জিএনইউ) সমর্থন যুগিয়েছিল। কিন্তু কয়েকমাস ধরে অপেক্ষাকৃত শান্ত ত্রিপোলিতে তাদের হঠাৎ লড়াই সংঘাতগুলোর অমীমাংসিত রয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তুলে ধরেছে।
২০১১ সালে দেশটির সাবেক এক নায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে নেটো সমর্থিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার পর থেকে লিবিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রায় হারিয়ে গেছে।
একটি অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে দেশটিজুড়ে চলা বড় যুদ্ধগুলো থামানো গিয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালে বেনগাজিভিত্তিক দেশটির পার্লামেন্ট নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলীয় বাহিনীগুলো ত্রিপোলিতে আক্রমণ শুরু করলে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ে।
ত্রিপোলির সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক। দেশটিতে তুরস্কের সামরিক উপস্থিতিও আছে।
মঙ্গলবার রাতে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ত্রিপোলির পরিস্থিতি শান্ত আছে আর সেখানে তুরস্কের সেনাদের ঘিরে কোনো নিরাপত্তা সমস্যা নেই।
মিতিগা বিমানবন্দরে তুরস্কের সামরিক উপস্থিতি আছে বলে কূটনীতিকরা জানিয়েছেন।