কট্টর-ডানপন্থি দল আরএন এর সমর্থকরা প্রথম পর্বের ভোটের ভাল ফলে সন্তুষ্ট। কিন্তু অন্যান্যদের আশঙ্কা, আরএন এর উত্থান ফ্রান্সের সমাজে উত্তেজনা বাড়াবে।
Published : 01 Jul 2024, 08:36 PM
ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্বে অভিবাসনবিরোধী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমালোচক মারিন লু পেনের কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) ঐতিহাসিক জয়ের পর তাদের ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে ঐক্যফ্রন্ট গড়ার চেষ্টা নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।
রোববারের ভোট পর্বের আনুষ্ঠানিক ফলে দেখা গেছে, আরএন পেয়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ ভোট। বামপন্থি ব্লক পেয়েছে ২৮ শতাংশ, আর প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর টুগেদার অ্যালায়েন্স পেয়েছে মাত্র ২২ শতাংশ ভোট।
মাক্রোঁর জন্য এটি বড় ধাক্কা। ওদিকে, আরএনের সমর্থকরা ভোটের ফলে সন্তুষ্ট। কারণ তারা পরিবর্তন চায়। কিন্তু অন্যান্যদের আশঙ্কা, আরএন এর উত্থান এবং তাদের জাতীয়তাবাদী প্লাটফর্ম ফ্রান্সের সমাজে উত্তেজনা বাড়াবে।
আগামী সপ্তাহে আরএন জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাবে কি না, তা নির্ভর করছে মাঝেন দিনগুলোতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিরা কী রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছায় তার ওপর। অতীতে আরএনকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে মধ্য-ডান ও মধ্য-বামপন্থি দলগুলো জোট বেঁধেছিল।
এবার বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট ও মাক্রোঁর টুগেদার অ্যালায়েন্সের নেতারা জানিয়েছেন, আগামী রোববারের রান-অফে আরএনকে হারাতে যে জেলাগুলোতে তাদের দুই জোট ভুক্ত অন্য দলের প্রার্থী ভালো অবস্থানে রয়েছেন, তার সমর্থনে তারা নিজ নিজ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেবেন।
কট্টর-ডানপন্থি বিরোধী ‘রিপাবলিকান ফ্রন্ট’ অতীতে অনেকটাই কাজে এসেছিল। তবে ফরাসি ভোটাররা এখনও রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশিত পথে দ্বিতীয় পর্বে ভোট দিতে প্রস্তুত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। তাই এবারে ‘রিপাবলিকান ফ্রন্ট’ এর মতো কিছু কাজে আসার সম্ভাবনা কম।
আরএন নেতৃত্বাধীন সরকারের বিকল্প বলতে গেলে মূলত যা হতে পারে তা হচ্ছে, ঝূলন্ত পার্লামেন্ট। আর তা হলে মাক্রোঁর প্রেসিডেন্সির মেয়াদের শেষ সময়টিতে শাসন পরিচালনায় অচলাবস্থা বিরাজ করবে।
প্রথম পর্বে নির্বাচনী এলাকাগুলোর যেগুলোতে কোনও প্রার্থীই সুস্পষ্ট জয় পায়নি সেখানকার শীর্ষ দুই প্রার্থী এবং ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া যে কোনও প্রার্থীর মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় আছে দ্বিতীয় পর্বের ভোটে তারা যাবে কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
ফ্রান্সের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো আরএনকে পরাজিত করার জন্য ভাল অবস্থানে থাকা প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে কতটা সফলভাবে জোরাল সমর্থন দিয়ে লু পেনকে কোণঠাসা করতে পারছে, তার ওপর নির্ভর করবে এই দলটি সরকার গঠন করতে পারবে কিনা সেটি।
আরএনকে ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলো যেমন একজোট হওয়ার চেষ্টা করছে, তেমনি আরএন আইনপ্রণেতারাও ভোটের ফল যাতে তাদের অনুকূলে আসে সে চেষ্টা নিচ্ছে। তারাও নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রথম পর্বে কম ভোট পাওয়া প্রার্থীদের সেই জায়গাগুলো থেকে প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নিচ্ছে যেখানে ভোটের ফল আরএন এর অনুকূলে আসতে পারে।
আরএন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাদের পছন্দনীয় প্রার্থী জর্ডান বারডেল্লা বামপন্থি দলগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করেছেন। স্যোশাল মিডিয়ায় তিনি কট্টর-বামদেরকে ফ্রান্সের অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন।
প্রথম পর্বের ভোট নিয়ে ইপসোস জরিপে দেখা গেছে, বামপন্থি জোট তরুণ ভোটারদের মধ্যে কট্টর-ডানপন্থিদের তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে। ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে তারা পেয়েছে ৪৮ শতাংশ ভোট। আর ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে তারা পেয়েছে ৩৮ শতাংশ ভোট।
ওদিকে, আরএন ৩৩ এবং ৩২ শতাংশ ভোট পেয়েছে মূলত বয়স্ক শ্রেনির মানুষদের মধ্যে। আর ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মধ্যে তারা সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে।