রানঅফ ভোটে শরণার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। তুরস্ক বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।
Published : 27 May 2023, 08:17 PM
রাত পোহালেই তুরস্কে রানঅফ ভোট। যে ভোটে নির্ধারিত হবে ২০ বছর ধরে দেশটিকে শাসন করে আসা রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানই পুনরায় ক্ষমতায় ফিরছেন, নাকি নতুন নেতার নেতৃত্বে নতুনরূপে পথ চলা শুরু হবে তুর্কীদের।
গত ১৪ মে তুরস্কের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোনো প্রার্থীই রানঅফ এড়াতে প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পাননি।
যদিও সেদিন সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে প্রথম হয়েছেন এরদোয়ান। তিনি ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পান। ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে দেশটির তরুণ ভোটাদের পছন্দের প্রার্থী কেমাল কিরিচতারোলু।
৫ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হওয়া সিনান ওগান রানঅফ ভোটের জন্য এরদোয়ানকে সমর্থন দিয়েছেন।
প্রথম পর্বের ভোটে সবার থেকে এগিয়ে থাকা এবং ওগানের সমর্থন নিশ্চিতভাবেই রানঅফে এরদোয়ানকে খানিকটা হলেও এগিয়ে রেখেছে।
যদিও কেমাল কিরিচতারোলু এখনো তার জয়ের বিষয়ে আশাবাদী এবং নানা ভাবে ভোটারদের মন জয় করতে চাইছেন। তিনি নির্বাচিত হলে লাখ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের সমর্থক ভোটারদের নিজের পক্ষে টানতে চাইছেন।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বিরোধী কিরিচতারোলুর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ তুলে বলেন, যদি কিরিচতারোলু জিতে যান তবে তা সন্ত্রাসীদের জন্য জয় হবে।
প্রথম দফা ভোটে প্রায় ৮০ লাখ ভোটার ভোট দেয়নি। তারা এবার ভোট দেবে এবং ভোট তার পক্ষে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কিরিচতারোলু।
বিবিসি জানায়, তিনি এ সপ্তাহে ‘বাবালা টিভি’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে চার ঘণ্টা ধরে দর্শকদের প্রশ্নের জবাব দেন। দুই কোটি ৪০ লাখ মানুষ ওই অনুষ্ঠানটি দেখেছেন। তুরস্কে মোট জনসংখ্যা আট কোটি ৫০ লাখ।
ইয়ুথ ক্যাম্পেইনার মেহতেপের বিশ্বাস, ইউটিউবে ম্যারাথন ওই প্রশ্ন-উত্তর অনুষ্ঠান কাজে দেবে। বলেন, ‘‘বিং অন বাবালা টিভি তরুণ অনেক ভোটারদের উপর প্রভাব ফেলবে, যারা প্রথম দফায় ভোট দেননি।”
এরদোয়ান ২০ বছর ধরে তুরস্ক শাসন করছেন। তিনি কর্তৃত্ববাদী শাসক। দেশটির সংবাদমাধ্যমের প্রায় ৯০ শতাংশই তার নিয়ন্ত্রণে। এরকম একজন প্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষে লড়াইয়ে কিরিচতারোলুর ইউটিউবকে ব্যবহার বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
নির্বাচনে এগিয়ে এরদোয়ান, তবুও রানঅফ ভোটের পথে তুরস্ক
তুরস্কে ভোট নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষদের ভাষ্য, ভোটারদের হয়তো একটি নিজস্ব পছন্দ আছে। কিন্তু তুরস্ক সরকার একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মৌলিক নীতিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রথম পর্বের ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর কিরিচতারোলুও একই ধরনের অভিযোগ করে বলেছিলেন, এদোয়ানের দল ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণায় হস্তক্ষেপ করছে।
বিবিসি জানায়, এরদোয়ানের বিজয় এবং চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকার পূর্বাভাসের জেরে আর্থিক বাজারে প্রতিক্রিয়া হিসেবে গত শুক্রবার ডলারের বিপরীতে তুর্কি লিরার দাম রেকর্ড পরিমান নেমে যায়।
দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা আরো বেড়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো নেতিবাচক অঞ্চলে নেমে গেছে।
গত কয়েকমাস ধরে অস্থিতিশীল অর্থনীতি তুরস্কে আলোচনার প্রথম বিষয় ছিল। কিন্তু রোববারের রানঅফ যতই ঘনিয়ে এসেছে, কথার লড়াই তত তীব্র হয়েছে এবং বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছে শরণার্থীরা।
বিশ্বে তুরস্কই সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।
কিরিচতারোলু ‘দেশটির এক কোটি ৩০ লাখ শরণার্থীকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে এক বছরের মধ্যে’ নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাকে রানঅফে সমর্থন দেওয়া অভিবাসন বিরোধী দল ভিক্টরি পার্টির নেতা উমিত ওজদাগ।
অধ্যাপক মুরাত এরদোয়ান নিয়মিত ফিল্ড স্টাডির মাধ্যমে শরণার্থীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। যেটিকে তিনি ‘সিরিয়ানস ব্যারমিটার’ নাম দিয়েছেন।
তার বিশ্বাস, সিরীয় শরণার্থী এবং ইরান, ইরাক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অবৈধ অভিবাসী মিলে তুরস্কে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়ে আছে।
তিনি বলেন, ‘‘শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তারা যে বক্তব্য দিয়েছে তা বাস্তব সম্মত নয়। বাস্তবে এটা করা অসম্ভব।
‘‘আমরা যদি স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের কথা বলি তবুও তা সম্ভব নয়। আর জোরে পাঠাতে হলে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি জনকে ফেরত পাঠাতে হবে।”
শরণার্থীদের নিয়ে তাই এরদোয়ান বিরোধীদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ উক্তি দৃষ্টিকটু, তবে এটা ভোটের ক্ষেত্রে একটা পার্থক্য তৈরি করে দিতে সক্ষম। কারণ, জনমত জরিপে দেখা গেছে, তুরস্কের ৮৫ শতাংশের বেশি মানুষ চান গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়া থেকে পালিয়ে তুরস্কে আসা শরণার্থীরা দেশে ফিরে যাক।
তুরস্কে কুর্দিরাও একটি বিতর্কিত ইস্যু। দেশটির দুই কুর্দিপ্রধান দলের মধ্যে কুর্দিপন্থি এইচডিপি কিরিচতারোলুকে সমর্থন দিয়েছে। আর কুর্দি-ইসলামিস্ট হুদা-পার সমর্থন দিয়েছে এরদোয়ানকে।
জীবনযাপনের বাড়তি খরচ মোকাবেলায় অপ্রচলিত অর্থনৈতিক কর্মসূচি পাল্টানোসহ কিরিচতারোলু তুরস্কের অভ্যন্তরীণ, পররাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক নীতিতে এরদোয়ান যেসব পরিবর্তন এনেছিলেন, তার বেশিরভাগই বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, এরদোয়ান বলছেন, তাকে ভোট দেওয়ার অর্থ হচ্ছে স্থিতিশীলতাকে ভোট দেওয়া।