জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে মালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের দেশ থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানান।
Published : 20 Jun 2023, 04:24 PM
মালির অন্তর্বর্তী সামরিক কর্তৃপক্ষের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলার সিদ্ধান্তে ‘খেদ’ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘সুশৃঙ্খলভাবে ও দায়িত্বশীলতার’ সঙ্গে মিশন শেষ করার আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের এ অবস্থান তুলে ধরেছে।
শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে মালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুলায়ে দিয়োপ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানান।
জাতিসংঘে দেওয়া বক্তব্যে দিয়োপ ‘মালি কর্তৃপক্ষ ও শান্তিরক্ষা মিশনের (মিনুসমা) মধ্যে আস্থার সংকট’ নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, মালি সরকার ‘দেরি না করে শিগগিরই’ মিনুসমা প্রত্যাহার করতে বলেছে।
“মিনুসমার ক্ষেত্রে মালির অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র আক্ষেপ জানাচ্ছে। মিনুসমার প্রত্যাহার অবশ্যই সুশৃঙ্খলভাবে ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে হতে হবে, এক্ষেত্রে মালির নাগরিকদের ও শান্তিরক্ষীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে,” মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমনটি বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, মালি সরকারের এই সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে রাজনৈতিক সংঘাত প্রশমনে ২০১৩ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা কাজ করছে। সেখানে মিশনে ১৩ হাজারের মতো শান্তিরক্ষী রয়েছেন, তার মধ্যে দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি। সেখানে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি সৈন্য রয়েছে কেবল শাদের।
বিবিসি লিখেছে, এক দশক ধরে চলা এই মিশন দেশটির ইসলামী গোষ্ঠীর সহিংসতার বিস্তার ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়ার ‘ওয়াগনার গ্রুপ’র ভাড়াটে যোদ্ধারা এখন মালির সামরিক শাসকদের সহায়তা করছে।
রাশিয়ার বেসরকারি এই প্যারামিলিটারি কোম্পানির বিরুদ্ধে ইউক্রেইন ও আফ্রিকার অংশজুড়ে যুদ্ধপরাধের অভিযোগ তুলেছে পশ্চিমা দেশগুলো।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইভান মাসলভ নামের এক ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, যাকে মালিতে ওয়াগনারের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, পাশ্চিমাদের অভিযোগের বিষয়ে ওয়াগনার তাদের কোনো বক্তব্য জানায়নি। মালি ও আফ্রিকার অন্যান্য অংশ জুড়ে প্যারামিলিটারি এই ইউনিট গোপনে কার্যক্রম চালায়।
মালিতে অস্থিরতার জন্য এর আগে ফ্রান্সের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়োপ। এবার জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন নিয়েও আপত্তি তুললেন তিনি। উপনিবেশিক শাসক ফ্রান্সের সঙ্গে মালির জোট গত বছরই ভেঙে গিয়েছিল।
মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ৩০ জুন। তবে সীমিত অগ্রাধিকারমূলক কিছু বিষয় বিবেচনায় এই মিশন পুনর্গঠনের সুপারিশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। কিন্তু এখন কী হবে তা পরিষ্কার নয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে মালিতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত এল-ঘাসিম ওয়েন বিবিসিকে বলেন, “নিরাপত্তা পরিষদ যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা তা অনুসরণ করব।”
তবে যে দেশে মিশন পরিচালিত হবে, সেই দেশের সম্মতি ছাড়া কার্যক্রম চালানো একেবারে অসম্ভব না হলেও তা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের মার্চে মালির সশস্ত্র বাহিনী ও ‘বিদেশি নিরাপত্তা কর্মীদের’ অভিযানের সময় মধ্য মালির মৌরা গ্রামে ৫০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করা হয়।
তবে মালি ও রাশিয়া উভয়েই এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
আরও পড়ুন:
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের দেশ ছাড়ার আহ্বান মালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর