ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সরকার গড়ার জন্য নির্ভর করতে হবে জোট এনডিএ-র শরিক চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউ এর ওপর।
Published : 04 Jun 2024, 07:41 PM
ভারতে সবচেয়ে বড় নির্বাচনের ফল আসছে। আর তাতে দেশটিতে একদলীয় শাসনের ইতি হতে চলারই আভাস মিলেছে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ভোটগণনার ফলে।
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একক ভাবে এগিয়ে আছে ২০৩ আসনে। ওদিকে কংগ্রেস ৮০ আসনে। আর এনডিএ জোট ২৯২ আসনে এবং ইন্ডিয়া জোট ২৩২ আসনে এগিয়ে আছে।
বিজেপি এবার তাদের জন্য ৩৭০ আসন আর এনডিএ জোটের জন্য ৪০০ আসনের লক্ষ্য র্নিধারণ করেছিল। কিন্তু ভোটের চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনী ফলের বিপরীতে এবার মোদীর দল বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারেনি।
ফলে এবার আর সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না দলটি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য মোদীকে নির্ভর করতে হবে জোট এনডিএ-র দুই শরিক, চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউ এর ওপর।
নীতীশের নেতৃত্বাধীন জনতা দল (ইউনাইটেড) ১৪টি আসন পাবে এবং নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ১৬ আসন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অতীতে এ দুইদলের নেতারই একাধিক বার এনডিএ ত্যাগ এবং ফিরে আসার ইতিহাস রয়েছে। এবার তারা কী করেন সেদিকেই নজর সবার।
সমর্থন ছাড়া বিজেপির পক্ষে কেন্দ্রে সরকার গড়া সম্ভব নয়, সেটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। আর এতেই দুই নেতার রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়ে গেছে। আর তারা সত্যিই শেষ পর্যন্ত বিজেপি-কে সমর্থন করেন, নাকি আবারও ভোল পাল্টান তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।
রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) বলছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং টিডিপি’র চন্দ্রবাবু নাইডু এবার মোদীর এনডিএ জোটকে বাদ দিয়ে বিরোধীপক্ষের সঙ্গে যোগ দিতে পারে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনেই জেডিইউ ও টিডিপি দুটি দলই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের অংশ হিসেবে ভোটে লড়লেও নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর এ দুই দল যে বিজেপিকে সমর্থন করতে বাধ্য থাকবে তা নয়। কিন্তু সরকার গড়ার চাবিকাঠি যে চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতিশ কুমারের হাতেই থাকছে সেটি সন্দেহাতীত।
ভোটের এই ফলাফলে মোদীর টানা তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হওয়া অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেলেও জওহরলাল নেহরুর মত পরপর তিনবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার রেকর্ড তিনি ছুঁতে পারলেন না।
ভোটের ফলে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে এনডিএ জোট খুব একটা স্বস্তিতে নেই। এ পরিস্থিতিতে ইন্ডিয়া জোট শরিক বাড়ানোর চেষ্টা নিতে চাইছে। আর জোট ধরে রেখে সরকার গড়তে এরই মধ্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি শিবির।
তাই বুধবারই শরিক দলগুলো সঙ্গে এনডিএ জোট বৈঠকে বসতে চলেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ইতিমধ্যে টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডি(ইউ) নেতা নীতিশ কুমারের সঙ্গে খোদ অমিত শাহ কথা বলেছেন।
ইতোমধ্যে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা নিজের বাসভবনে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকেও বসেছেন। অমিত শাহ, রাজনাথ সিংও সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। সবমিলিয়ে, এখন থেকেই ঘর গোছাতে শুরু করে দিয়েছে বিজেপি।
বসে নেই ইন্ডিয়া জোটও। ইন্ডিয়া জোট ২০০-র বেশি আসনে এগোনোর পর থেকেই ঘর গোছাতে শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস শিবির। এই জোট গড়ার শুরুতে নীতীশ কুমার প্রধান ভূমিকা নিলেও পরবর্তীতে দলবদল করে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তবে সেকথা ভুলে নীতীশ কুমারের সঙ্গে কথা বলেছে কংগ্রেস।
তাছাড়া জোট শরিক না হলেও সরকার গঠনে বড় ফ্যাক্টর হতে চলা চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গেও কথা বলেছে কংগ্রেস।
এই লোকসভা নির্বাচনে সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা ফিরে পেতে পারে কংগ্রেস। বিরোধী দলনেতার পদের জন্য লোকসভায় ৫৫টি আসনে জেতা প্রয়োজন। এ বার ভোটগণনার প্রবণতা বলছে, ‘ইন্ডিয়া’র সব সহযোগী দল মিলে দু’শোর গণ্ডি টপকাতে চলেছে। ফলে লোকসভার অধিবেশনেও এ বার বিরোধীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মোদীকে।