ধসে পড়া টানেলের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মাটি ছাড়াও কংক্রিটের বড় বড় বোল্ডার থাকায় ড্রিল কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
Published : 18 Nov 2023, 04:47 PM
ভারতের উত্তরাখণ্ডে একটি হাইওয়ে টানেল ধসে প্রায় ৪০ শ্রমিক মাটির নিচে আটকে পড়ার সপ্তম দিনেও এখনো উদ্ধার কাজে উল্লেখ করার মত অগ্রগতি নেই।
গত তিনদিন ধরে বিশালাকারের বিশেষায়িত এক ড্রিল মেশিন দিয়ে মাটি গর্ত করে শ্রমিকদের বের করে আনার যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছিল শুক্রবার সেটা আটকে গেছে। কারণ, ভেঙে গেছে ড্রিল মেশিনটি। শনিবার দ্বিতীয় আরেকটি ড্রিল মেশিন আসার কথা। সেটি আসলে পুনরায় ড্রিল কাজ শুরু হবে বলে স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ধসে পড়া টানেলের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মাটি ছাড়াও বড় বড় বোল্ডার থাকায় ড্রিল কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। শুক্রবার ভূগর্ভে ড্রিল মেশিনটি বন্ধ হয়ে গেলে উদ্ধারকর্মীরা সেটি পুনরায় চালু করার চেষ্টা করে। সে সময়ে ‘বড় আকারের ফাটলের শব্দ’ শোনার পর তারা কাজ স্থগিত করে বলে রাষ্ট্র-পরিচালিত জাতীয় সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন কর্পোরেশনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়।
গত রোববার স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় ব্রহ্মখাল-যমুনাত্রী জাতীয় মহাসড়কের অংশে নির্মাণাধীন ওই টানেলটির একটি অংশ ধসে পড়ে।। পরে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, টানেলটি ধসে পড়ার আগের রাতে সেখানে ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। ধসের পর যারা টানেলের বেরিয়ে যাওয়ার মুখে কাজ করছিলেন তারা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। কিন্তু মাটির প্রায় ২০০ মিটার গভীরে কর্মরত ৪০ বা ৪১ জন শ্রমিক আটকা পড়ে যান। টানেলটি প্রায় ৪ হাজার ৫৩১ মিটার লম্বা। মাটি ধসে সেটির বেরিয়ে যাওয়ার মুখটি বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে মাটির নিচে আটকা পড়া শ্রমিকরা ভালো আছেন বলে এখনো দাবি করে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা। টানেল ধসে পড়ার দিন সকাল থেকেই তাদের পাইপের মাধ্যমে খাবার, পানি ও অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা ওয়াকি-টকির মাধ্যমে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
যদিও কোথা কোথা বলা হচ্ছে, শ্রমিকদের মধ্যে মাথাব্যথা, উদ্বেগ এবং বমি বমি ভাবের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তবে কর্মকর্তারা এ খবর উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, তারা ভালো আছে।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা দেভেন্দ্র পাটওয়াল রয়টার্সকে বলেন, “ধসে পড়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে যে মেশিনটি দিয়ে ড্রিল করা হচ্ছিল সেটি শুক্রবার ভেঙে গেছে। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর থেকে আরেকটি মেশিন আকাশ পথে আনা হচ্ছে। শনিবার দুপুরের পর সেটির পৌঁছে যাওয়ার কথা।”
উদ্ধার কাছে সহায়তা করার জন্য রাজধানী দিল্লি থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উত্তরাখণ্ডের পথে রওয়ানা হয়েছেন বলে জানান তিনি।
কি কারণে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেলটির একটি অংশ ধসে পড়লো সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো তথ্য প্রদান করেনি। তবে ভারতের পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখণ্ডে নিয়মিতই ভূমিধস, ভূমিকম্প এবং আকস্মিক বন্যা হতে দেখা যায়।
উত্তরাখণ্ডে টানেল ধস: আটকে পড়াদের উদ্ধারে আশা জাগাচ্ছে নতুন ড্রিল মেশিন
ভারতে টানেল ধস: ৩ দিনেও উদ্ধার পায়নি ৪০ শ্রমিক
টানেলটি উত্তরাখণ্ড রাজ্যের যে জাতীয় মহাসড়কে নির্মিত হচ্ছে সেটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উচ্চাভিলাষী চারধাম হিন্দু তীর্থযাত্রা মহাসড়কের অংশ। ধসে পড়া টানেলটি রাজ্যের উত্তর কাশীর সিল্কিয়ারাকে দন্দলগাঁও এর সঙ্গে সংযুক্ত করবে। যার ফলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান উত্তর কাশীর থেকে যমুনাত্রী ধামের মধ্যেবর্তী সড়ক পথের দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার কমে যাবে।
উত্তরাখণ্ডে হিন্দুদের চারটি তীর্থস্থানকে জুড়ে দেওয়ার লক্ষ্যে চারধাম মহাসড়কটি নির্মিত হচ্ছে।। ৮৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০১৮ সালে টানেলটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০২২ সালের জুলাই মাসে সেটির নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। পরে তা পিছিয়ে ২০২৪ সালের মে মাস করা হয়েছে। ২০২৪ সালেই ভারতের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন। মোদী সরকার চাইছে নির্বাচনের আগেই মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে।
এদিকে, ভূতত্ত্ববিদ, স্থানীয় বাসিন্দা এবং কর্মকর্তারা মনে করছেন, পাহাড়ের ভেতর দিয়ে দ্রুত নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার কারণেই টানেল ধসের এই ঘটনা ঘটেছে।