ভারতের উত্তরাখণ্ডে নির্মাণাধীন একটি হাইওয়ে টানেল ধসের পড়ার পর তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ভেতরে আটকা পড়া ৪০ শ্রমিককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
মাটির ভেতর বড় পাইপ ঢুকিয়ে তাদের কাছে পৌঁছানোর এবং তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বিশাল বিশাল বোল্ডারের কারণে পাইপ ঢোকানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তবে আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে রোববার সকাল থেকেই একটি পাইপের মাধ্যমে খাবার, পানি ও অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে এবং তারা সেখানে সুস্থ এবং নিরাপদ আছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন ভারতীয় এক কর্মকর্তা।
রোববার স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজ্যটির উত্তরকাশী জেলায় ব্রহ্মখাল-যমুনাত্রী জাতীয় মহাসড়কের অংশে নির্মাণাধীন টানেলটির একটি অংশ ধসে পড়ে।
উত্তর প্রদেশের ত্রাণ কমিশনার জি.এস. নাভীন বুধবার রয়টার্সকে বলেন, “ইভাকুয়েশন পাইপ মাটির নিয়ে প্রবেশ করাতে দিল্লি থেকে একটি ভারি মেশিন আনা হয়েছে। এর আগে যে পাইপটি ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল সেটি বোল্ডারে আটকে গেছে।”
গত শনিবার রাতে ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ ওই হাইওয়ে টানেলটির নির্মাণ কাজ করছিল।
মঙ্গলবার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, যারা টানেলটির বের হয়ে যাওয়ার মুখের কাছে কাজ করছিলেন তারা ধসের পর বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। তবে ৪০ শ্রমিক, যারা ভেতরে কাজ করছিলেন তারা আটকে পড়েন।
টানেলটি উত্তরাখণ্ড রাজ্যে একটি জাতীয় মহাসড়কে নির্মিত হচ্ছে, যা চারধাম হিন্দু তীর্থযাত্রা পথের অংশ। যে টানেলটি ধসে পড়েছে সেটা উত্তরাখন্ডের উত্তর কাশীর সিল্কিয়ারাকে দন্দলগাঁও এর সঙ্গে সংযুক্ত করবে। যার ফলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান উত্তর কাশীর থেকে যমুনাত্রী ধামের মধ্যেবর্তী সড়ক পথের দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার কমে যাবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলোর একটি এই চারধাম হাইওয়ে।
যার লক্ষ্য উত্তরাখণ্ডে হিন্দুদের চারটি তীর্থস্থানকে জুড়ে দেওয়া। ৮৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ভারতের পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখণ্ডে প্রায়ই ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এটি ভূমিকম্প এবং বন্যা প্রবণ এলাকাও বটে। তার মধ্যে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে দ্রুত নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার কারণেই টানেল ধসের এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন ভূতত্ত্ববিদ, স্থানীয় বাসিন্দা এবং কর্মকর্তারা।
২০১৮ সালে টানেলটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০২২ সালের জুলাই মাসে সেটির নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। পরে তা পিছিয়ে ২০২৪ সালের মে মাস করা হয়েছে।