ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতায়। ভার্সা সাহু নামের এক নারী কয়েকসপ্তাহ ধরে অস্বস্তি এবং শ্বাসকষ্টে ভোগার পর অবশেষে চিকিৎসকরা স্ক্রুটি বের করেছেন।
Published : 26 Apr 2024, 10:49 PM
দুই মাস আগে শ্বাসের সঙ্গে দুর্ঘটনাবশত ভার্সা সাহুর নাকফুলের একটি স্ক্রু ভেতরে চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাননি তিনি। ভেবেছিলেন স্ক্রুটি পেটের মধ্যে গেছে। স্বাভাবিক নিয়মেই সেটি বের হয়ে যাবে।
কিন্তু না। স্ক্রুটি আসলে পেটে যায়নি। এটি চলে গিয়েছিল ফুসফুসে। সেখানেই এটি গেঁথে ছিল। এতে কয়েকসপ্তাহ ধরে অস্বস্তি এবং শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন ভার্সা। অবশেষে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটি বের করে এনেছেন চিকিৎসকরা।
এমন ঘটনা ‘অত্যন্ত বিরল’ বলেই ভাষ্য চিকিৎসকদের। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়।
সেখানেই নিজের বাড়ি থেকে ফোনে বিবিসি-কে ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন ভার্সা সাহু। ৩৫ বছর বয়সী এই নারী অন্য নারীদের মতোই বিয়ের প্রতীক হিসেবে নাকফুল পরতেন।
'স্ক্রু ঢিল হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি'
বিবিসি-কে ভার্সা জানান, নাকফুলটি ১৬-১৭ বছর আগে বিয়ের সময় থেকেই পরে ছিলেন তিনি। তার কথায়, “বুঝতে পারিনি, স্ক্রু ঢিল হয়ে গেছে।
“আমি গল্প করতে করতে গভীর শ্বাস নিতেই বুঝতে পারলাম, স্ক্রু ঢুকে গেল। ভাবতে পারিনি, স্ক্রুটি আমার শ্বাসনালীতে ঢুকে যাবে। আমি ভেবেছিলাম, হয়ত পেটে চলে গেছে।”
ভার্সার এ ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে, যখন স্ক্রুটি ফুসফুসে যাওয়ার এক মাস পর তিনি অবিরাম কাশি, ঠাণ্ডা এবং নিউমোনিয়া নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। প্রাথমিকভাবে তিনি চিকিৎসকের কাছে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানান।
ভার্সা ভেবেছিলেন, নাকের পুরনো কোনও সমস্যার জন্য শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খাওয়াও শুরু করেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এরপরই একজন ফুসফুস বিশেষজ্ঞর কাছে যান তিনি।
ফুসফুসে গেঁথে ছিল স্ক্রু:
সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, ফুসফুসে গেঁথে আছে একটি বস্তু। পরে বুকের এক্সরে করে দেখা যায় জিনিসটি কী। প্রথমে ফাইব্রিওপটিক ব্রঙ্কোস্কোপ (ছোট্ট ক্যামেরা লাগানো সাঁড়াশি) শ্বাসনালীর ভেতর দিয়ে ঢুকিয়ে স্ক্রুটি বের করার চেষ্টা করেন চিকিৎসক। কিন্তু এই সাঁড়াশি দিয়ে স্ক্রুটি ধরতে পারা যায়নি।
এরপর ভার্সাকে পাঠানো হয় আরেক চিকিৎসক দেবরাজ জশের কাছে। তিনি মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের একজন ফুসফুস বিশেষজ্ঞ।
'রোগীকে কাউন্সেলিং করতে হয়েছিল'
চিকিৎসকের কথায়, “আমাদের প্রথমে রোগীকে কাউন্সেলিং করতে হয়েছিল।” প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে ভার্সা উদ্বিগ্ন ছিলেন।
তবে চিকিৎসকরা তাকে বোঝান, মানবদেহ এমনভাবে তৈরি যে, এতে বাইরের কোনও জিনিসের স্থান নেই। তাই দেহ এই জিনিস গ্রহণ করবে না এবং চিকিৎসা না করে থাকলে নিউমোনিয়া আরও জটিল আকার ধারণ করবে।
চিকিৎসক দেবরাজ জশ স্ক্রুটি বের করতে ইনভেসিভ সার্জারিও করতে হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন ভার্সাকে। তবে এই অস্ত্রোপচারে দীর্ঘমেয়াদে জটিলতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকায় পরে তিনি ফাইব্রিওপটিক ব্রঙ্কোস্কোপ দিয়েই আরেকবার স্ক্রুটি বের করতে চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেন।
জশ বলেন, ব্রঙ্কোস্কোপ দিয়ে এমন তীক্ষ্ন কোনও বস্তু বের করা খুবই কঠিন। আর এটি ফুসফুসে গেঁথে ছিল দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে। ফলে এর চারপাশ ঘিরে গজিয়ে গিয়েছিল টিস্যু।
“আমাদেরকে স্ক্রুটি বের করার সময় খুবই সতর্ক থাকতে হয়েছিল। কারণ, এটি সরু শ্বাসনালীতে ঘষা খেলে জখম এবং রক্তপাত হয়ে বিপত্তি ঘটতে পারত”, বলেন জশ।
তবে যা হোক, শেষ পর্যন্ত ৩০ মিনিটের ওই অপারেশন সফল হয়েছে এবং ভার্সাকে চারদিন পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জশ বলেন, এমন ঘটনা সচারাচার দেখা যায় না। গত দুই দশকে ভারতে এ ধরনের ঘটনা কেবল দুইবার ঘটেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
জশ জানান, ড্রাই ফ্রুট বা বিটেল নাট কখনও কখনও মানুষের ফুসফুসে আটকায়, তাও এমনটি বেশিরভাগই ঘটে থাকে শিশুদের ক্ষেত্রে কিংবা ৮০ বছরের উপরের বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে। ৩০ বছর বয়সের কোঠার একজন নারীর ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটা বিরল।
ভার্সা সার্জারি-পরবর্তী চেকআপের জন্য “নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন এবং তিনি এখন পুরোপুরি ভাল আছেন” বলে জানান জশ।
আবার নাকফুল পরবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ভার্সা হেসে দিয়ে বলেছেন, “কোনওভাবেই না। আমি কখনোই ভাবিনি এমন কিছু ঘটবে। কিন্তু তা ঘটেছে। আবার এমন ঘটুক তা চাই না।”