এরদোয়ানই ফের ক্ষমতায়? রায় দিচ্ছে তুরস্ক

কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে দুই সপ্তাহের মধ্যে হবে রানঅফ ভোট।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 06:35 AM
Updated : 14 May 2023, 06:35 AM

শক্তিশালী ভূমিকম্প অর্ধলক্ষাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার তিন মাস পর দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে তুরস্ক।

দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান আরেক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন কিনা, রোববারের ভোটে তার-ই ফয়সালা হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

কেবল প্রেসিডেন্টই নন, সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলা ভোটে তুর্কিরা নতুন পার্লামেন্ট ও এর ৬০০ এমপিও ঠিক করবেন।

রোববারের ভোটে এরদোয়ানের প্রধান প্রতিপক্ষ কামাল কিলিসদারোগলু, জয়ী হলে যিনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমানোর অঙ্গীকার করেছেন। ২০১৬ সালে ব্যর্থ এক অভ্যুত্থানচেষ্টার পর এরদোয়ান প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে একচ্ছত্র করেছিলেন।

কিলিসদারোগলুর পেছনে বিরোধীদের যে জোট আছে, সেটি বেশ বড় হওয়ায় তার জয়ের সম্ভাবনা প্রবল হলেও এরদোয়ানের সঙ্গে তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলেই মনে হচ্ছে।

এমন এক সময়ে তুরস্কের প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ভোটারকে তাদের নেতা বেছে নিতে হচ্ছে, যখন অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশা মোকাবেলায় দেশটির বেশিরভাগ মানুষকেই খাবি খেতে হচ্ছে।

সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ৪৪ শতাংশে পৌঁছে গেছে, প্রকৃত অবস্থা এর চেয়েও ভয়ানক বলে দাবি অনেকের। তিন মাস আগের জোড়া ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির ১১টি প্রদেশের দশা সবচেয়ে খারাপ। এসব এলাকায় এরদোয়ানের ভোট কমবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

আঙ্কারার এক চশমার দোকানে থাকা বুরাক ওন্ডার জানান, কেউই এখন আর চশমা কিনছে না।

“লোকজন এমনকী ছাড়ের কথাও জিজ্ঞেস করছে না, কারণ ছাড়ে পরবর্তী দামও দিতে পারবে না,” বলেছেন তিনি।

পুরনো ধাঁচের অর্থনীতি ত্যাগ করে সুদের হার কমানোয় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে, অথচ পার্শ্ববর্তী ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে সুদের হার বাড়িয়েছে।

চশমার দোকানের কয়েক দরজা পরে, ওই সড়কেই দোকান থাকা রহিমাকে দেখা যায় সব পণ্যের ওপর নতুন মূল্যতালিকা টানাতে। এই কাজ তাকে এখন প্রায় প্রতিদিনই করতে হচ্ছে।

“লোকজন আসে আর জিজ্ঞেস করে, কেন সবসময়ই দাম বাড়ছে। তারা কোনো কিছু না কিনেই চলে যায়,” বলেন তিনি।

কেবল রহিমাই নন, তার ১৯ বছর বয়সী মেয়ে সুদেনুরও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তার ইচ্ছা ক্রীড়াবিজ্ঞান পড়া, কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, তাতে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে বলে আশঙ্কা তার।

তার মতো প্রথমবার ভোটার হওয়ার সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ; এদের রায় রোববারের ভোটে বড় ব্যবধান গড়ে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জার্মানি, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশে থাকা প্রায় পৌনে দুই কোটি ভোটার এরই মধ্যে তাদের ভোট দিয়ে দিয়েছে। এবার প্রবাসী ভোটের হার ৫৩ শতাংশ, যা নতুন রেকর্ডও গড়েছে।

তবে ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের পক্ষে এবার ভোট দেওয়াটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। অনেকেই তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে, কিন্তু ভোট দেওয়া যাবে কেবল নিবন্ধিত এলাকা থেকেই।

ওই ভূমিকম্প পরবর্তী সরকারি তৎপরতা ও পুনর্বাসন এবার নির্বাচনী প্রচারণায় দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছিল, সবার ওপরে ছিল অর্থনীতি।

রোববারের ভোটে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে শীর্ষ দুই প্রার্থীকে নিয়ে হবে রান-অফ ভোট।

প্রেসিডেন্টের পদের লড়াইয়ে নামা ৪ প্রার্থীর মধ্যে মুহররম ইনসে তিন দিন আগে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন; তবে তার আগেই ব্যালট ছাপা শেষ হয়ে যাওয়ায় তার নাম বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

শনিবার প্রচারের শেষ পর্যায়ে ৭৪ বছর বয়সী কিলিসদারোগলু আধুনিক সেক্যুলার তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

আর ৬৯ বছর বয়সী এরদোয়ান প্রচার শেষ করেন ইস্তাম্বুলের হায়া সোফিয়ায় মাগরিবের নামাজ পড়ে।

তুরস্কের নির্বাচনের দিকে মুসলিম বিশ্ব তাকিয়ে আছে, নামাজ শেষে উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে একে পার্টির এ নেতা এমনটা বলেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে।

এ তিনজনের বাইরে ব্যালটে থাকা অন্য নামটি উগ্র-জাতীয়তাবাদী সিনান ওগানের।

তুরস্কে এখন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বেশি হওয়ায় সবার চোখ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে থাকলেও আইন প্রণয়ের গুরুত্ব থাকায় পার্লামেন্ট নির্বাচনও হেলাফেলার নয়।

তুরস্কের সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে পার্লামেন্টে আসন পেতে হলে প্রাপ্ত ভোটের ন্যূনতম ৭ শতাংশ লাগে, যে কারণে বেশিরভাগ দলই জোট করে নির্বাচনে নামে।

এরদোয়ানের একে পার্টিও পিপলস অ্যালায়েন্স নামে একটি জোটের সদস্য, যেখানে জাতীয়তাবাদী এমএইচপি ও আরও দুটি দল রয়েছে।

কিলিসদারোগলুর মধ্য-বামপন্থি রিপাবলিকান পিপলস পার্টির সঙ্গে ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স জোটে আছে জাতীয়তাবাদী গুড পার্টি ও আরও চারটি ছোট দল।

কুর্দিঘনিষ্ঠ এইচডিপি তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহৎ বিরোধীদল, তারা অন্য একটি জোটের সদস্য হলেও নির্বাচনী প্রচারে নেমেছিল গ্রিন লেফট নাম নিয়ে।