Published : 25 Jan 2024, 07:37 PM
জাপানের কিয়োটো অ্যানিমেশনের একটি স্টুডিওতে ইচ্ছা করে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ৩৬ জনকে হত্যার অভিযোগে দোষী এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।
২০১৯ সালে ঘটা ওই ঘটনাটি ছিল গত কয়েক দশকের মধ্যে জাপানে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘটনা। সেখানে হতাহতদের বেশিরভাগই ছিলেন তরুণ শিল্পী। যা অ্যানিমে জগৎকে হতবাক করে দিয়েছিল।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ৪৫ বছরের শিনজি আওবাকে বিচারে আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছে। তার আইনজীবী আদালতের কাছে তার ‘মানসিক অক্ষমতার’ কথা বিবেচনা করে তাকে কঠিন সাজা না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন বলে জানায় বিবিসি।
সে আবেদন বাতিল করে দিয়ে বিচারক বলেন, আওবা খুব ভালো করেই জানতেন তিনি কী করছেন।
কিয়োটো জেলা আদালতের প্রধান বিচারপতি মাসুদা বৃহস্পতিবার বলেন, “আমি নিশ্চিত যে, আসামি ওই অপরাধ কাণ্ডের সময় মানসিকভাবে অক্ষম বা দুর্বল, কিছুই ছিলেন না।
“৩৬ মানুষের প্রাণহানি খুবই গুরুতর এবং হৃদয়বিদারক ঘটনা। যতখানি আতঙ্ক ও যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে ওই ব্যক্তিরা প্রাণ হারিয়েছেন তা ভাষায় বর্ণনাতীত।”
ওইদিন কিয়োটো অ্যানিমেশনের স্টুডিওতে যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ ছিল। আগুন লাগার পর সেটি ছড়িয়ে পড়লে তারা স্টুডিওর উপরের তলায় আটকা পড়ে যান এবং সেখানে পুড়ে মারা যান।
নির্মম এ ঘটনা জাপান জুড়ে শোক ও ক্ষোভের ঝড় তুলেছিল। দেশটির সাধারণ মানুষ এবং সংবাদমাধ্যম গভীর মনযোগে এ ঘটনার গতিবিধি নজরে রেখেছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আওবার মৃত্যুদণ্ডের সাজার আবেদন করেন। বলেন, তার কাজ (লেখা উপন্যাস) চুরি হয়ে গেছে এই বিশ্বাসে তাড়িত হয়ে তিনি ইচ্ছা করে ওই স্টুডিওতে আগুন ধরিয়ে দেন।
আওবা দাবি করেন, কিয়োটো অ্যানিমেশন যেটি কিওঅ্যানি নামে পরিচিত তারা তার একটি উপন্যাস চুরি করেছে। তাদের একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তিনি ওই উপন্যাসটি পাঠিয়েছিলেন।
যে রাগ থেকে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে তিনি একটি কর্মব্যস্ত দিনে ওই স্টুডিওর উপর হামলে পড়েন। তিনি সেটির নিচেরতলায় পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন এবং বার বার ‘মৃত্যু হোক’ বলে চিৎকার করেন।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আওবা তার দোষ স্বীকার করে নেন এবং বলেন, তিনি ভাবেননি তার কর্মকাণ্ডে এত মানুষের প্রাণহানি হবে।
“আমার মনে হয়েছিল, এটা করা ছাড়া আমার সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। তাই আমি এটা করেছি।
“আমি মারাত্মক অপরাধবোধে ভুগছি এবং আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
অগ্নিকাণ্ডে আওবা নিজেও মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছিলেন। তার শরীর ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত প্রাণে বেঁচে যান। সুস্থ হওয়ার পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, “কিওঅ্যানি স্টুডিও তার লেখা চুরি করেছে এই বিভ্রম থেকে তিনি এ কাজ করেছেন। তবে ঘটনার সময় নিজের বিভ্রমদ্বারা তিনি পরিচালিত হননি। বরং তিনি মানসিকভাবে পূর্ণ সক্ষম ছিলেন এবং বুঝতে পারছিলেন তিনি কি করতে চলেছেন।”
এ ঘটনায় কিয়োটো স্টুডিওর ৭০ কর্মীর মধ্যে ৩৬ জনই নিহত হন। বাকি ৩২ জন আহত হন।
সাজা ঘোষণার সময় বেশ কয়েকজন আহত এবং নিহতদের স্বজনরা আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বলে জানায় বিবিসি।