বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেশের হার উদযাপন আন্দোলনরত ইরানিদের

আন্দোলনকারীরা চান, ইরানজুড়ে যে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে সরকার যেন খেলাকে ব্যবহার করে ওই আগুন নিভিয়ে দিতে না পারে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2022, 03:12 PM
Updated : 30 Nov 2022, 03:12 PM

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে বিশ্বকাপ ফুটবলের গ্রুপ পর্ব থেকে ইরানের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেলেও শোক নয় বরং মঙ্গলবারের ওই হার উদযাপন করেছেন আন্দোলনরত ইরানিরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে আন্দোলনরতদের সড়কে নেচে-গেয়ে বিশ্বকাপের মত এত বড় আসরে জাতীয় ফুটবল দলের হার উদযাপন করতে দেখা যায়।

দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে ‘বি’ গ্রুপের শেষ রাউন্ডে ইরানকে ০-১ গোলে হারায় যুক্তরাষ্ট্র।

মাসিহ আলীনেজাদ নামে ইরানের একজন নারী সাংবাদিক তার টুইটার একাউন্টে ইরানিদের দলের হার উদযাপনের কিছু ভিডিও পোস্ট করেন। ওইসব ভিডিওতে গাড়ি থামিয়ে একদল ইরানি তরুণ-তরুণীকে উচ্চশব্দে গানের তালে নাচতে দেখা যায়।

ভিডিওটি পোস্ট করে আলীনেজাদ লেখেন, ‘‘ইরান এমন একটি দেশ যেখানে লোকজন ফুটবল নিয়ে খুবই আবেগপ্রবণ। এখন তারা সানানদাজ নগরীতে সড়কে নেমে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের ফুটবল দলের হার উদযাপন করছে। তারা চায় না সরকার খেলাকে ব্যবহার করে তাদের খুনের রাজত্বে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হোক।”

সানানদাজ ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশের রাজধানী।

আলীনেজাদের পোস্ট করা আরেকটি ভিডিওতে একজনকে চলন্ত গাড়ির জানালা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ওড়াতে দেখা যায়। ভিডিওতে রাস্তায় ভুভুজেলা বাঁশির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।

আরেকটি ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে বন্ধুদের সঙ্গে কেক হাতে নাচতে নাচতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজ দলের হার উদযাপন করতে দেখা যায়।

পরে ইরানের কয়েকজন সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, মেহরান সামাক নামে ২৭ বছরের ওই তরুণকে মঙ্গলবার গুলি করে হত্যা করেছে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী।

আলীনেজাদ নিজে মেহরান সামাকের ওই ভিডিও পোস্ট করে লেখেন,

‘‘হৃদয় ভেঙ্গে গেছে!

ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী ইসলামিক রিপাবলিকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল দলের জয় উদযাপন করার জন্য তাকে হত্যা করেছে।”

উদযাপনের অংশ হিসেবে মেহরান সামাক নিজের গাড়িতে তার বাগদত্তাকে নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। ওই সময় তার মাথায় গুলি করা হয় বলে জানান আলীনেজাদ।

ইরানের আরেক সাংবাদিক পোউরিয়া জিরাতি লেখেন, মেহরানকে মাথায় গুলি করা হয়। পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান।

লন্ডন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল থেকেও এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

শুধু দেশে নয় মঙ্গলবার স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা ইরানিরাও দেশজুড়ে চলা আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। কারো কারো হাতে মাশা আমিনি লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে।

Also Read: ইরান পরিস্থিতি ‘গুরুতর’, নিহত ৩শ’র বেশি: জাতিসংঘ

Also Read: মাশা আমিনি: ইরানে বিক্ষোভের আগুন আরো তীব্র হচ্ছে

একজন ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ লেখা টি-শার্ট পরে এসেছিল। কিন্তু স্টেডিয়ামের নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ঢুকতে বাধা দেয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

গত সেপ্টেম্বর মাসে তেহরানে নীতি পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যু ঘিরে ইরান জুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। যা এখন সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।

ইরান সরকার কঠোর হাতে এই আন্দোলন দমন করতে চাইছে। এখন পর্যন্ত তিনশ’র বেশি আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ। জাতিসংঘ থেকে ইরানের পরিস্থিতি ‘গুরুতর’ বলে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।