গণহত্যার ৩০ বছর পূর্তির দিন কিগালিতে সমবেত বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে এক ভাষণে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের নিরাশ করেছে।
Published : 07 Apr 2024, 11:37 PM
রুয়ান্ডায় রোববার গণহত্যা দিবসে ১৯৯৪ সালে প্রায় ৮ লাখ মানুষের মৃত্যুর বলি হওয়ার সেই ঘটনায় হস্তক্ষেপ না করে নিস্ক্রিয় থাকার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দোষারোপ করেছেন রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে।
গণহত্যার ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে সমবেত গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে এক ভাষণে কাগামে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ‘আমাদের সবাইকে নিরাশ করেছে’।
তিনি বলেন, “যে ব্যাপক মাত্রার ক্ষতি আমাদের হয়েছে তাতে রুয়ান্ডা অবনত হয়ে গেছে। আর আমরা যে শিক্ষা পেয়েছি তা রক্তে খচিত।”
আজ থেকে ৩০ বছর আগে ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে আজকের এই দিন থেকে ১০০ দিন (৭ এপ্রিল থেকে ১৫ জুলাই) সময়কালে সংখ্যাগুরু হুতু সম্প্রদায়ের চরমপন্থিরা হত্যা করে সংখ্যালঘু তুতসি সম্প্রদায়ের মানুষকে।
এই হত্যাযজ্ঞে অন্তত ৫০০,০০০ তুতসি এবং এক হাজারেরও বেশি হুতু নিহত হয়। সবমিলে মোট নিহতের সংখ্যা বলা হয়ে থাকে ৮০০,০০০ এর কাছাকাছি।
রুয়ান্ডার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুভেনাল হাবিয়ারিমানাকে বহনকারী বিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সূত্রপাত হয়েছিল এই গণহত্যার। প্রেসিডেন্ট ছিলেন সংখ্যাগুরু হুতু সম্প্রদায়ের।
প্রেসিডেন্ট হাবিয়ারিমানাকে হত্যার পেছনে তুতসিদের হাত আছে বলে দোষারোপ করেছিল হুতুরা। আর তারপরই হুতু চরমপন্থিরা তুতসিদের ওপর চড়াও হয়ে তাদের নির্বিচারে হত্যা করে। মধ্যপন্থি কিছু হুতু যারা তুতসিদের কাউকে কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন তারাও হত্যার শিকার হন।
গণহত্যার পর মূলত ক্ষমতা নেয় তুতসি বাহিনী। তারা তুতসি গণহত্যার বদলা নিতে কয়েক হাজার হুতুকে হত্যা করেছিল বলে অভিযোগ আছে।
বিবিসি জানায়, রোববার রুয়ান্ডা গণহত্যার বর্ষপূর্তিতে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কিগালির গণহত্যা স্মৃতিসৌধের সমাধিগুলোতে ফুলের তোড়া অর্পন করেছেন। সেখানে ২৫০,০০০ নিহতের সমাধি আছে বলে মনে করা হয়। প্রেসিডেন্ট কাগামে সৌধে নিহতদের স্মরণে অগ্নিশিখাও জ্বালান।
পরে এক বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট কাগামে উগান্ডা, ইথিওপিয়া ও তাঞ্জানিয়াসহ অন্যান্য আফ্রিকান দেশকে ধন্যবাদ জানান, তুতসি শরণার্থী নেওয়া এবং গণহত্যার অবসান ঘটাতে সহায়তা করার জন্য।
তিনি বলেন, “রুয়ান্ডায় শান্তিরক্ষী হিসাবে কাজ করার জন্য অনেক দেশ তাদের প্রতিনিধি হিসাবে ছেলে মেয়েদেরকে এখানে পাঠিয়েছে।
“ওই সৈনিকরা রুয়ান্ডাকে হতাশ করেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদেরকে নিরাশ করেছে। তা অবজ্ঞা বা কাপুরুষতা যেদিক দিয়েই হোক না কেন। গণহত্যার ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থতা সেইকাল থেকেই লজ্জ্বার বিষয় হয়ে আছে।”
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন কিগালির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি রুয়ান্ডার গণহত্যাকে তার প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন।
ওদিকে, রুয়ান্ডা গণহত্যা দিবসের জন্য পাঠানো একটি ভিডিও বার্তায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁও স্বীকার করেন যে, তার দেশ এবং মিত্রদেশগুলো মিলে ওই গণহত্যা বন্ধ করতে পারত। কিন্তু তারা কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি।