ভারতে এবার পাঠ্যপুস্তক থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে পর্যায় সারণী

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব নিয়ে বিজ্ঞানী এবং শিক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2023, 03:15 PM
Updated : 1 June 2023, 03:15 PM

নবম ও দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান পাঠ্যবই থেকে গত মাসে চার্লস ডারউইনের থিওরি অব ইভাল্যুয়েশন বা বিবর্তনতত্ত্ব সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর এবার ভারতের ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) দশম শ্রেণীর পাঠ্যবই থেকে পেরিয়ডিক টেবিল বা পর্যায় সারণী সরিয়ে নিয়ে নতুন  বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

মহামারী চলাকালে পাঠ্যক্রম যৌক্তিককরণের অংশ হিসেবে অস্থায়ীভাবে পাঠ্যক্রম থেকে এই অধ্যায়গুলি বাদ দেওয়া হয়েছিল। এখন এনসিইআরটি সেগুলো স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার খবর প্রকাশ করে ইন্ডিয়া টুডে।

গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলো পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব নিয়ে বিজ্ঞানী এবং শিক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এখন শুধুমাত্র ওই শিক্ষার্থী যারা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে রয়াসনকে পছন্দের বিষয় হিসেবে বেছে নেবে, কেবলমাত্র তারা পর্যায় সারণী পড়বে। ভারতে দশম শ্রেণী হলো স্কুলের শেষ বছর যেখানে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে বিজ্ঞান পড়ানো হয়।

ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়, এনসিইআরটি পাঠ্যপুস্তক থেকে উপাদানগুলির পর্যায়ক্রমিক শ্রেণীবিভাগের অধ্যায় ৫ এবং চার্লস ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের অধ্যায় ৯ সরিয়ে ফেলেছে। যার মধ্যে পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তি, মানুষের বিবর্তন এবং বংশগতির মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

কেনো এই অধ্যায়গুলো সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা এনসিইআরটি দেয়নি। তারা চলমান পাঠ্যক্রম যৌক্তিককরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা এটা করেছে বলে মনে করা হয়।

কোভিড-১৯ মহামারিতে যেসব সেক্টর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার অন্যতম শিক্ষা।

শিক্ষার্থীদের উপর লেখাপড়ার চাপ কমানো এবং দূরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম মসৃণ করার অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এনসিইআরটি তাদের চলমান পাঠ্যক্রম যৌক্তিককরণ প্রক্রিয়ার কাজ করে।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যক্রমের প্রায় ৩০ শতাংশ সরিয়ে ফেলা হয়। পর্যায় সারণী এবং ডারউইনের তত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলিসহ কিছু বিষয় সাময়িকভাবে বাতিল করার উদ্দেশ ছিল মহামারির ক্রান্তিকালে পাঠ্যক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রদাণ কার্যক্রম মসৃণগতিতে চালিয়ে নেওয়া।

কিন্তু এখন স্থায়ীভাবে বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলো সরিয়ে ফেলা নিয়ে বিজ্ঞানী ও শিক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রসায়ন শিক্ষার ভিত্তি প্রস্তুত করে পর্যায় সারণী। যেটি উপাদান এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে একটি পদ্ধতিগত জ্ঞান প্রদান করে।

একইভাবে, ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব জীববিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা, যা শিক্ষার্থীদেরকে পৃথিবীতে প্রাণের আন্তঃসংযোগ এবং বৈচিত্র্য বুঝতে সক্ষম করে তোলে। এই অধ্যায়টি সরিয়ে ফেলা শিক্ষার্থীদের জটিল প্রক্রিয়াগুলি বোঝার ক্ষমতাকে বাধা দিতে পারে।

যদিও পাঠ্যক্রম যৌক্তিককরণ কার্যকর শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একটি প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীদের উপর থেকে পাঠ্যক্রমের চাপ কমানো এবং একটি ব্যাপক শিক্ষা প্রদান কার্যক্রমের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অতীতেও এনসিইআরটি-র পাঠ্যপুস্তক যৌক্তিককরণ নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা হয়েছে। সমালোচকরা বলেছেন, এনসিইআরটি ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করছে।