যা ঘটেছে তা ওই নারীদের সম্মতিতেই হয়েছে বলে ভাষ্য এ কৌতুকশিল্পীর।
Published : 27 Jan 2024, 05:38 PM
ব্রিটিশ কৌতুকশিল্পী, অভিনেতা ও লেখক রাসেল ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছেন চারজন নারী।
তাদের ভাষ্য, ২০০৬ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ওই অপরাধ করেছেন ব্র্যান্ড। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এই অভিনেতা বলেছেন, যা ঘটেছে তা ওই নারীদের ‘সম্মতিতেই’ হয়েছে।
দ্য সানডে টাইমস, দ্য টাইমস এবং চ্যানেল ফোরের যৌথ তদন্তে অভিযোগগুলো বেরিয়ে আসে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
তদন্তে যে সাত বছর সময়ের কথা বলা হয়েছে, ওই সময়ে ক্যারিয়ারে দারুণ সময়ে ছিলেন ব্র্যান্ড। ওই সময়ে তিনি হলিউডে অভিনয় করেছেন। এছাড়া বিবিসি রেডিও এবং চ্যানেল ফোরেও কাজ করেছেন। তদন্তের বিষয়টি প্রথম সানডে টাইমসে প্রকাশিত হয়। আর চ্যানেল ফোরে প্রকাশিত হয় শনিবার।
অভিযোগ প্রকাশের পরপর ব্র্যান্ড উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের ওয়েম্বলি পার্ক থিয়েটারে কমেডি পারফর্ম করেন। ঘণ্টাব্যাপী চলা ওই অনুষ্ঠানে অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে ব্র্যান্ড শ্রোতাদের উদ্দেশে বলেন, এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা তিনি আগেই বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি।
অভিযোগকারী নারীদের মধ্যে একজনের দাবি, রাসেল ব্র্যান্ড তাকে তার লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়িতে ধর্ষণ করেছেন। পরে ওই নারীকে চিকিৎসাও নিতে হয়। দ্য টাইমস বলছে, চিকিৎসার নথিপত্র তারা হাতে পেয়েছে।
আরেক নারীর অভিযোগ, তিনি যখন ব্র্যান্ডের নিপীড়নের শিকার হন, সেই সময়ে তার বয়স ছিল ১৬ বছর; আর ব্র্যান্ডের বয়স ছিল ৩১। তিন মাসের সম্পর্ক চলার সময় ব্র্যান্ড তার উপরে যৌন নিপীড়ন করেন।
তৃতীয় অভিযোগকারীর দাবি, লস অ্যাঞ্জেলেসে একসঙ্গে কাজ করার সময় ব্র্যান্ড তার ওপরে যৌন নির্যাতন করেছিলেন। এবং এই কথা ওই নারী যদি ফাঁস করে দেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে উল্টো আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি এসেছিল অভিনেতার কাছ থেকে।
চতুর্থ নারীর অভিযোগও প্রায় একই রকম। তার ভাষ্য, তার উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন ব্র্যান্ড।
শুক্রবার সোশাল মিডিয়ায় ব্র্যান্ড একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ওই ভিডিওতে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ব্র্যান্ড বলেন, “অভিযোগে যে সময়ের কথা বলা হয়েছে, সে সময়ে অভিনয়, কমেডি এবং লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ওই সময়ে জীবন কিছুটা লাগামছাড়াই গেছে। ওই সময়ে যাদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছি, অপর পক্ষের সম্মতিতেই হয়েছে।"
ব্র্যান্ড বলেন, যেভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেটা স্পষ্টভাবে একটি 'সমন্বিত আক্রমণ'। ব্যাপারটা গুরুতর, তাই প্রতিটি অভিযোগ তিনি খতিয়ে দেখছেন।
এই কৌতুক অভিনেতার নাম উল্লেখ না করে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, যৌন নিপীড়নের অভিযোগের একটি সিরিজ কেইস নিয়ে তারা মিডিয়া রিপোর্টিং সম্পর্কে সচেতন। তবে আলাদাভাবে কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে অভিযোগ তাদের হাতে আসেনি।
পুলিশ বলছে, কেউ যদি মনে করেন তিনি নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, সেটি যতদিন আগেই ঘটে থাকুক, তাকে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
সানডে টাইমস বলেছ, অভিযোগকারী নারীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতেও ‘অপ্রস্তুত' বোধ করছিলেন। তারা চারজনই সংবাদমাধ্যমে তার ছদ্মনাম ব্যবহারের অনুরোধ জানান।
ব্র্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে তার বক্তব্য দেওয়ার জন্য আট দিন সময় বেঁধে দিয়েছিল সানডে টাইমস। এরপর ব্র্যান্ড তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেন।
ব্র্যান্ড কৌতুকাভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০০ সালে। এর কয়েক বছর পর ‘বিগ ব্রাদার্স বিগ মাউথ' আনুষ্ঠানে সঞ্চালকের কাজ পান, যা তাকে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
হলিউডের ‘ফরগেটিং সারাহ মার্শাল', ‘গেট হিম টু দ্য গ্রিক' এবং ‘আর্থার' সিনেমায় ব্র্যান্ড অভিনয় করেছেন। সংবাদসূত্র: বিবিসি
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)