গত কয়েকদিনে’৪০ সন্ত্রাসীকে’ গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী।
Published : 29 May 2023, 03:44 PM
জাতিগত সহিংসতায় বিক্ষুব্ধ ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে ফের দাঙ্গায় পুলিশসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
রোববারের এসব ঘটনায় আরও ১২ জন আহত হয়েছেন। এর আগে এ রাজ্যটিতে জাতিগত সহিংসতায় অন্তত ৮০ জনের প্রাণ যায়।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, অত্যাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত কথিত সন্ত্রাসীরা সেরু ও সুগুনু এলাকার বহু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে এমন খবর ছড়ানোর পর রাজ্যটির বেশ কয়েকটি অংশে নতুন করে সহিংসতা দেখা দেয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার মণিপুর যাচ্ছেন। তার সফরের কয়েক ঘণ্টা আগে এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
গত কয়েকদিনে রাজ্যটিতে ’৪০ সন্ত্রাসীকে’ গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে রোববার জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “সন্ত্রাসীরা বেসামরিকদের বিরুদ্ধে এম-১৬, একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল ও স্নাইপার বন্দুক ব্যবহার করছে। তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে খুব শক্ত পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। প্রায় ৪০ জন সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে খবর পেয়েছি আমরা।”
আগের দুই দিনে ইম্ফল উপত্যকার আশপাশে বেসামরিকদের ওপর চালানো সহিংস আক্রমণের ঘটনাগুলোকে ‘সুপরিকল্পিত’ বলেই তিনি মনে করছেন এবং এগুলো অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে মন্তব্য করেছেন বীরেন সিং।
দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকা ও এর আশপাশে বসবাস করা সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংখ্যালঘু কুকি এবং নাগাসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর বিরোধ চলছে।
মনিপুরের ৩৬ লাখ জনগোষ্ঠীর ৫৩ শতাংশই মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর সদস্য, যারা মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বী বা হিন্দু সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত। মণিপুরে মেইতেইরা ‘শিডিউলড ট্রাইব’ (তফসিলি জাতিগোষ্ঠী) হিসেবে গণ্য হয় না। যে কারণে সরকারি চাকরি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘সংরক্ষণ সুবিধা’র সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে আসছে বলে দাবি মেইতেইদের।
ভারতে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী হিসেবে পরিগণিত হলেও মণিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় মেইতেইদের ‘শিডিউলড ট্রাইব’ স্বীকৃতি দিলে অন্য সংখ্যালঘু আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্য ওই রাজ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে- এই আশঙ্কা থেকে মেইতেইদের ‘শিডিউলড ট্রাইব’ স্বীকৃতির বিরোধিতা করছে রাজ্যের অন্য আদিবাসী সংখ্যালঘুরা, যাদের একটি বড় অংশ ধর্মীয়ভাবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।
এদিকে মেইতেই সম্প্রদায় ‘শিউউলড ট্রাইব’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত হওয়ার জন্য গত কয়েক বছর ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিল। ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপিও মেইতেইদের এই দাবির পক্ষে সহানুভূতিশীল। তাদের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েই মণিপুরে বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে সেখানে সরকার গঠনও করেছে বিজেপি।
এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হওয়ার মধ্যেই গত মাসে মণিপুর হাই কোর্ট রাজ্য সরকারকে মেইতেইদের দাবি বিবেচনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্যের অন্য আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় এবং হাই কোর্টের ওই আদেশের প্রতিক্রিয়ায় মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ডাকা মিছিল শুরু হলে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হয়।
এসব সহিংসতার আগে সংরক্ষিত বনভূমি থেকে কুকি গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনা চলছিল, তখন ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি ছোট ছোট আন্দোলন হয়েছিল।
সফরের আগে অমিত শাহ মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায় এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনেকগুলো বৈঠক করেছেন। তিনি মেইতেই ও কুকি উভয় সম্প্রদায়কে শান্ত থেকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়া এড়াতে রাজ্য সরকার মণিপুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করে ইন্টারনেট বন্ধ করে রেখেছে।
আরও পড়ুন: